বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এসএমই খাতের ব্যবসা ৩০ হাজার কোটি টাকার

উৎপাদন করা হয় চামড়াজাত পণ্য নকশিকাঁথা হ্যান্ডিক্র্যাফট হ্যান্ডলুম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পণ্য - ঢাকায় ৬৮টি, রাজশাহীতে ৩২টি, চট্টগ্রামে ২৫টিসহ সারা দেশে ১৭৭টি ক্লাস্টার

শাহেদ আলী ইরশাদ

দেশের ৫১টি জেলায় ১৭৭টি অঞ্চলভিত্তিক ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ব্যবসার আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব বন্দর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে টেকসই করতে বড় অবদান রাখছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় ৬৮টি, রাজশাহীতে ৩২টি, চট্টগ্রামে ২৫টিসহ সারা দেশে ১৭৭টি ক্লাস্টার অঞ্চল থাকলেও নামে-বেনামে এমন হাজারো ক্লাস্টার অঞ্চল রয়েছে বলে জানা গেছে।

এসএমই ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, নির্দিষ্ট এলাকায় ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত একই ধরনের পণ্য বা সেবা উৎপাদনকারী ৫০ বা তার বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত হয় গুচ্ছ বা ক্লাস্টার। এসএমই ফাউন্ডেশনের হিসেবে সারা দেশে এমন ব্যবসায়ী অঞ্চল আছে ১৭৭টি।

যেখানে উৎপাদন করা হয় চামড়াজাত পণ্য, নকশিকাঁথা, হ্যান্ডিক্র্যাফট, হ্যান্ডলুম, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ১১টি খাতের বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পণ্য বাজারজাতকারীদের সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ না থাকায় নানা রকম সমস্যা হচ্ছে এসব উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর।

উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা ঘরে বসে যেসব নকশিকাঁথা তৈরি করছি সেটা বিক্রয়ের জায়গাটা পাচ্ছি না। আমাদের মূল সমস্যা এটাই। বড় পরিসরে যাত্রা শুরুর আগে আধুনিক মেশিনারি দরকার। তার জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। লাগবে দক্ষ জনবলও। যদিও বিটাক কিছু দক্ষ জনবল তৈরি করে দিচ্ছে কিন্তু তাও চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

তথ্যমতে, দেশের ১৭৭টি অঞ্চলভিত্তিক ক্লাস্টারের ৭০ হাজার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের ৭৪ শতাংশই নারী। এসব ক্লাস্টারের বার্ষিক ব্যবসার আকার ৩০ হাজার কোটি টাকা।

এসব ক্লাস্টারের ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর চালানো জরিপে দেখা যায়, ৭৯ শতাংশ ছোট, ১৬ শতাংশ ক্ষুদ্র এবং ৫ শতাংশ মাঝারি প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের জ্ঞান না থাকায় খুব বেশি সুবিধা করতে পারছেন না তারা। সমস্যা আছে অর্থায়ন নিয়েও।

জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে যে বিনিয়োগ ও সহায়তা দরকার তার কোনোটাই হচ্ছে না। আমাদের কিছু ঘাটতি আছে। আমরা নীতিনির্ধারকদের

বোঝাতে পারি না এসএমই খাতে বিনিয়োগের একটা বড় অংশ এখানে বরাদ্দ দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, ক্লাস্টারভিত্তিক এলসি সুবিধার বড় সুযোগ আমাদের কাছে আছে। এতে যেখান থেকে পণ্য আমদানি করবেন তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে খরচ কমানোর পাশাপাশি লাভবান হতে পারবেন এসব উদ্যোক্তা।

সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এসব উদ্যোক্তার দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত ডিজাইন, পণ্য বহুমুখীকরণ ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার চাহিদামতো ঋণ বিতরণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকরা।  দক্ষ জনবল ও আর্থিক সহায়তার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ক্লাস্টারগুলোকে রপ্তানিতে সহায়তা দিতে পারলে রপ্তানি বহুমুখীকরণের অনেক বড় সম্ভাবনা রয়েছে। দেশেও এসব উদ্যোক্তার  পণ্যের বাজার বহুমুখীকরণ দরকার।

সর্বশেষ খবর