গত দুই বছর কমার পর আবারও গতি ফিরেছে কৃষি ও খাদ্য পণ্য রপ্তানি। ফলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি আয় বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছতে পারে। অর্থবছরের প্রথমার্ধের রপ্তানি আয়ের হিসাব মেলানোর পর খাত-সংশ্লিষ্টরা এমন আশা প্রকাশ করেছেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরপর দুই অর্থবছরে রপ্তানি কমার পরে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে উৎপাদিত কৃষি ও খাদ্য পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সবজি, ফল, চা, মসলা এবং তামাকের মতো কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা ৫৯ কোটি ৫৫ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। তথ্য বলছে, আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৪ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফল, চা, মসলা, তামাক এবং পশুর চর্বি রপ্তানি বেশি হওয়ার ফলে সেখান থেকে আয় বেশি আসছে। কৃষক, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক, বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারকরা দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এটি ২০০৫ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে কৃষি রপ্তানির বৈশ্বিক মূল্য (মাছ বাদে) ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
জাতিসংঘের খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনের প্রতিবেদন বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষি এবং খাদ্য পণ্য রপ্তানিকারক, যার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। যদিও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালের কমে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি আয়কারীদের দলে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। যদিও পরের ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য রপ্তানি আয় হয়েছিল ১২৮ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১১৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান দেখায়, পরবর্তী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৮৩ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ডলারে নেমে আসে। ২০২৩-২৪ রপ্তানি আয় হয় ৯৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ লাখ ডলার। ফলে রপ্তানি আয় বিলিয়ন-ডলারের নিচে নেমে আসে।
তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয় আবার আশার আলো দেখাচ্ছে, কারণ এটি ইতোমধ্যে ৫৯ কোটি ৫৫ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের আয় করে ফেলেছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজিত পণ্য থেকে আয় চলতি অর্থবছরে আবার বিলিয়ন ডলারে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারা বলেন, বিলিয়ন-ডলার উপার্জনে কৃষি পণ্য রপ্তানির পুনঃপ্রবেশ দেশের অত্যধিক প্রয়োজন। রপ্তানি পণ্যের ঝুড়িতে কৃষিপণ্য একটি নতুন আশা ও মাত্রা জুগিয়েছে। এর ফলে আশা করা যায়, তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা হ্রাস পাবে।
পোশাক খাত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের জন্য একক বৃহত্তম রপ্তানি আয়কারী, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ দখল করে রেখেছে।