চাপের মুখে পড়ে এনডিটিভির সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত পিছু হটল ভারত সরকার। এনডিটিভির কর্ণধার প্রণয় রায়ের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় বৈঠক হয় কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর। সেই বৈঠকের পরেই দেশটির মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আপাতত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
খবরে বলা হয়, গতকালই এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছে এনডিটিভি। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা এক আবেদনে তারা জানিয়েছে, আইনের যে ধারার ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা সংবিধান-বিরোধী। চ্যানেল সূত্রের খবর, আজ সুপ্রিম কোর্টে ওই আবেদন নিয়ে যাওয়ার কথা তাদের আইনজীবীর। তার আগেই সোমবার সরকার এই স্থগিতাদেশ জারি করল।
২০১৫ সালে জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে সংবাদ সম্প্রচারের উপরে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, ওই সম্প্রচার থেকে বিদেশে বসে থাকা জঙ্গিদের হ্যান্ডলাররা অনেক খবর পেয়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি জানায়, পঠানকোট হামলার সময়ে এনডিটিভি ইন্ডিয়া ওই নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে। কমিটির সুপারিশ মেনে ৯ নভেম্বর রাত একটা থেকে ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্র।
এনডিটিভির পাল্টা দাবি, তারা যে সব তথ্য প্রকাশ করেছে সেগুলি সেনা বাহিনীরই দেওয়া। অন্য সংবাদমাধ্যমও ওই তথ্য প্রকাশ করেছে। সম্প্রচার বন্ধের পরেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগ তোলে সাংবাদিককুল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আজও রাহুল গাঁন্ধী বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার আড়ালে আসলে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে মোদি সরকার।’’ এ দিন সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সংগঠন একযোগে দিল্লির প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ করে।
গত কয়েক দিন ধরে বিজেপির অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নেন, একটি চ্যানেলকে শাস্তি দিয়ে বাকিদেরও বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বার বার বলে এসেছেন, ‘‘নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। জরুরি অবস্থার সঙ্গে এর তুলনা হয় না।’’ প্রশ্ন হল, তা হলে আজ কেন পিছু হটল সরকার?
টুইটারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দাবি, এনডিটিভি কর্তৃপক্ষই তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তারা জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে এনডিটিভির মতামত ঠিকমতো শোনা হয়নি। ফলে আপাতত সরকারি সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখে তাদের বক্তব্য ফের জানানোর সুযোগ দেওয়া হোক। কেন্দ্র সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছে। এনডিএ সরকার কংগ্রেসের মতো সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধে বিশ্বাস করে না। অন্য দিকে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার দাবি, ‘‘সত্যের জয় হয়েছে।’’
বিডি প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-২০