শববাহী গাড়ি উদ্বোধন করতে সুদূর ওড়িষ্যা থেকে তাকে আমন্ত্রন করে আনা হয়েছে। মন্ত্রী-এমপি বা হোমরা চোমরা গোছের কেউ নন। সেই দানা মাঝি। কিছুদিন আগে যিনি স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ১২ কিলোমিটার হেঁটে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। টাকার অভাবে স্ত্রীর মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি সেদিন দানা মাঝি। দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। নিরুপায় হয়ে মৃত স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই ১২ বছরের মেয়ের হাত ধরে হাঁটা শুরু করেন। ১২ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের অনুরোধে গাড়ি পাঠান জেলা প্রশাসক।
সেই দানা মাঝি এবার যাচ্ছেন শববাহী গাড়ি উদ্বোধন করতে। কোন মন্ত্রী-এমপি নয়, ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদম পৌরসভা এই মাঝিকেই বেছে নিয়েছে উদ্বোধনের জন্য। আগামিকাল, ২৬ জানুয়ারি পৌরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এই গাড়ি উদ্বোধন করবেন মাঝি।
স্থানীয় নাগরিক সমিতির উদ্যোগে কেনা হয়েছে ওই শববাহী গাড়ি। স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর শিবশঙ্কর ঘোষ জানালেন, মন্ত্রী, বিধায়ক বা সাংসদের তহবিলের আনুকূল্যের বদলে এলাকার মানুষের অর্থে কেনা হয়েছে গাড়িটি। প্রায় ন’লক্ষ টাকা মূল্যের গাড়িটি কেনার জন্য ঋণও নিতে হয়েছে। শিবশঙ্কর বলেন, এলাকার মানুষের উদ্যোগকে কুর্ণিশ জানাতেই এমন ভাবনা। আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষজন ওই গাড়ি প্রয়োজনের সময় বিনা খরচে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন।”
গত বছর দানার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পর হইচই পড়েছিল গোটা দেশে। এরপর নানা মহল থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। তার মেয়েদের পড়াশানোর ব্যবস্থাও হয়েছে। এখনও নিজের স্ত্রী আমাঙ্গদেহির ছবি কাছে রাখেন সবসময়। ভারতের সবথেকে পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্রতম জেলাগুলির একটা – ওড়িষ্যার কালাহান্ডির বাসিন্দা এই দানা মাঝি জীবনে প্রথমবার শহর দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে। এবার শিবশঙ্করদের আমন্ত্রণে কলকাতায় এসে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখেছেন দানা।
দানার কথায়, “নাগরিক সমিতির উদ্যোগ খুব ভাল। ওরা আমাকে এতদূর থেকে ডেকে এনেছেন। তবে আমার মতো প্রিয়জনের দেহ বহনের দুর্ভোগ যেন কারও না হয়।”
স্থানীয় বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো থেকে অনাহারে থাকা মানুষদের খাওয়ানো— অনেক কাজই ওই ওয়ার্ডের মানুষ করেন।”
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ