সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জাস্ট পিস সামিটে হাজির হয়েছিলেন ইয়োনমি পার্ক নামে উত্তর কোরিয়ার এক তরুণী। মঞ্চে হাজির হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে শুনিয়েছেন তার কাহিনি। তার হৃদয়বিদারক কাহিনি শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সেই মঞ্চে হাজির হওয়া অনেকেই। নিজেকে নর্থ কোরিয়ান ডিফেক্টর হিসাবেই পরিচয় দেন সেই সম্মেলনে।
উত্তর কোরিয়া থেকে কী ভাবে পালিয়ে এলেন, সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন পার্ক। তবে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে গোটা বিশ্বের যা-ই ধারণা থাকুক না কেন, কিম জং উন যে তার কাছে ভগবান সেটা স্বীকার করেছেন পার্ক। তিনি বলেন, কিম আপনাদের কাছে হাসির পাত্র হতে পারে ঠিকই কিন্তু আমার কাছে ভগবান।
একটা কঠিন বাস্তবে ভরা ছিল পার্কের জগৎ। তিনি যখন একটু একটু করে বুঝতে শিখছেন, দেখেছেন কী ভাবে কথায় কথায় মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। বিদেশি ছবি দেখলেই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত। সমাজের এই কঠিন মুখ দেখে বড় হয়েছেন তিনি।
পার্ক জানান, তার এক বার টাইটানিক ছবিটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। খুব ভাল লেগেছিল তার। এই ছবির কয়েকটি দৃশ্য তার মধ্যে একটা খিদে জাগিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, সেখানে স্বপ্ন দেখা যায়, ভালবাসা যায়, স্বাধীনতা রয়েছে!
অবৈধ ব্যবসার জন্য ইয়োনমির বাবা গ্রেফতার হওয়ার পরই পুরো পরিবার ঘরছাড়া হল। পোকামাকড় খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। ১৬ বছর বয়সেই পার্কের বোন পরিবার ছেড়ে চীনে পাড়ি দেন। পার্কও সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। রাতের অন্ধকারে এক অজ্ঞাতপরিচয়ের সহযোগিতায় জমে যাওয়া ইয়ালু নদী পেরিয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে চীনের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশে ঢুকে পড়েন। কিন্তু এখানেও বিপত্তি। চীনা সেনাদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন মা-মেয়ে। তারা ইয়োনমি-কে নির্বাসনে পাঠানোর হুমকি দিল। তার মাকে ফের উত্তর কোরিয়ায় পাঠানোর তোড়জোড় করল। তবে একটা শর্তেই মা-মেয়েকে ছেড়ে দিতে রাজি হল চীনা সেনারা। সেই শর্ত ছিল ইয়োনমিকে তাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে হবে। মেয়েকে তাদের হাত থেকে বাঁচাতে মা নিজেকে সেনাদের কাছে সঁপে দেন। চোখের সামনে মা-কে ধর্ষিত হতে দেখেন ইয়োনমি। এই বর্ণনা দিতে দিতে চোখের পানি বেঁধে রাখতে পারেননি পার্ক। একজন মেয়ে হয়ে মায়ের সঙ্গে ঘটা সেই দৃশ্য আজও তাঁকে বেদনাহত করে বলে জানান পার্ক।
পার্ক আরও জানান, তার মা ও তাকে যৌনদাসী হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ৬৫ ও ৩০০ ডলারের বিনিময়ে। ২ বছর ধরে যৌনদাসী হিসাবেই কাটিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে এক মিশনারিজের সঙ্গে তাকে পরিচয় করে দেওয়া হয়। তাকে পালাতে সাহায্য করবে বলে শর্তও রাখে সেই মিশনারিজ। কী সেই শর্ত? পার্ক জানান, তাকে বলা হয় খ্রিস্টধর্মের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিতে হবে। সেই শর্তে রাজি হয়ে যাওয়ার পর পার্কের পালানোর বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। রাতের অন্ধকারে গোবি মরুভূমি দিয়ে সফর শুরু হয়। পার্কের সঙ্গে ছিলেন তারই মতো আরও ৮ উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা। সঙ্গে নেন ছুরি, বিষ। ঠিক হয়, মঙ্গোলিয়ার সীমান্তে ধরা পড়লেই এ গুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারবেন তারা। এটাও ঠিক হয় ধরা পড়লে নিজেদের মেরে ফেলবেন, কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় আর ফিরে যাবেন না। তার একমাত্র লক্ষ্য পুরো বিশ্বকে জানানো কী শোচনীয় অবস্থায় উত্তর কোরিয়ার মানুষ প্রতি দিন বেঁচে রয়েছে। পার্কের সেই কাহিনির ভিডিও এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন