জঙ্গিদের হাতে এখন ল্যাপটপ বোমা। এ নিয়ে উদ্বিঘ্ন ভারত। কারণ সাদামাটা ল্যাপটপের নিরীহ চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে ধ্বংসাত্মক রূপ৷ তার ব্যাটারি, ডিভিডি ড্রাইভ কিংবা কি-বোর্ডের নীচে ভরা রয়েছে বিস্ফোরক৷ সংকেত পেলেই যা ফেটে গিয়ে বিপর্যয় ঘটাবে৷ অথচ সে বিস্ফোরক এমনভাবে লাগানো যে, বিমানবন্দরের সতর্ক স্ক্যানারের চোখেও ধরা পড়বে না৷ এই পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
জঙ্গিরা এখন বিমানে বা বিমানবন্দরে নাশকতা ঘটাতে এ ধরনের ল্যাপটপ বোমাকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে বলে আশংকা। আইএস ও আল কায়দার হাতে যে এই মারণাস্ত্র এসে গেছে, তার প্রমাণ পেয়ে আমেরিকা ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার হয়েছে৷ বিমানে ল্যাপটপ বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অবশ্য তা নির্দিষ্ট কয়েটা দেশ থেকে আসা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে। এরপর ব্রিটেনগামী বিমানেও ল্যাপটপ নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ভারতে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ভার যাদের হাতে, সেই সিআইএসএফদের ইঙ্গিত, ভবিষ্যতে নয়াদিল্লিও একই পথে হাঁটতে পারে৷
কলকাতায় সিআইএসএফ-এর ডিজি ওমপ্রকাশ সিং জানিয়েছেন, বিমানে ল্যাপটপ সম্পর্কে সিআইএসএফকে সতর্ক করা হয়েছে৷ কীভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দিল্লির বিমানবন্দরের আদলে কলকাতা ও দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে বডি স্ক্যানার বসানোর চিন্তাভাবনা চলছে৷ গত তিন মাস ধরে দিল্লিতে চলছে বডি স্ক্যানারের ‘ট্রায়াল রান৷’ তাতে শরীরের সঙ্গে বাঁধা বিস্ফোরক বা অস্ত্রের ছবি সহজে ধরা পড়বে৷ যদিও এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাই দিল্লি বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্য বিমানবন্দরে বসানো হবে এই যন্ত্র৷
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আল শাহবাব নামে একটি জঙ্গি সংগঠন সোমালিয়ার মোগাদিশু ও জিবুতির মাঝখানে একটি বিমানের মধ্যে ল্যাপটপ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়৷ ল্যাপটপ বহনকারী জঙ্গির মৃত্যু হয়৷ কোনওমতে কাছাকাছি বিমানবন্দরে নামিয়ে আনার পর রক্ষা পায় বিমানটি৷ তদন্তে জানা যায়, ডিভিডির খোলের ভিতর রাখা ছিল বিস্ফোরক৷ এর পর বিশ্বের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দেয় যে, জঙ্গিদের হাতে রয়েছে ল্যাপটপ বোমা৷ বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তা ধরা না পড়লেও ডিটোনেটরের সাহায্যে দূর থেকে তা ফাটানো যায়৷ সেই কারণেই বিমানযাত্রীদের ল্যাপটপ ও যাত্রীদের হাবভাবের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সিআইএসএফ কর্তারা৷
কলকাতা বিমানবন্দরের কয়েকটি জায়গাকে ‘গ্রে এরিয়া’ বলে ঘোষণা করেছে সিআইএসএফ৷ জায়গাগুলিতে সিআইএসএফ-এর গোয়েন্দাবাহিনী প্রত্যেক যাত্রীর চলাফেরা, হাবভাবের উপর কড়া নজরদারি চালাতে শুরু করেছে৷ সিসিটিভির মাধ্যমেও যাত্রীদের উপর চলছে বিশেষ নজরদারি৷ গোপনে তরল বিস্ফোরক নিয়ে যাতে জঙ্গিরা বিমানে উঠতে না পারে, তার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে বসছে বিশেষ যন্ত্র৷ এই ‘ডিটেক্টর’-এর সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করা যাবে তরল বিস্ফোরক৷ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ