ব্রিটিশ এমপি ও আইনজীবীদের একটি প্যানেল দাবি করেছে মিশরের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি জেলখানায় অকালে মারা যেতে পারেন। মুরসির আগাম মৃত্যুর জন্য ক্ষমতাসীন আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকে দায়ী করে প্যানেলটি বলেছে মুরসিকে কারাবন্দি রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, বুধবার এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের তিন আইনপ্রণেতার নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ স্বাধীন বন্দিত্ব পর্যালোচনা প্যানেল (ইনডিপেনডেন্ট ডিটেনশান রিভিউ প্যানেল) এ দাবি করেছেন।
ব্রিটিশ এমপিরা জানান, ৬৬ বছর বয়সী মুরসি ডায়াবেটিস, লিভার ও কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কারাগারে তাকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে না। প্যানেল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুরসিকে কারাগারে দিনে ২৪ ঘণ্টার ২৩ ঘণ্টাই একাকিত্বে রাখা হয়। মাত্র এক ঘণ্টার জন্য তাকে ব্যায়ামের সুযোগ দেয়া হয়।
প্যানেলটি আরও বলছে, নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ এবং শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেশনকে মানা হয় না। লন্ডনে প্যানেলটির প্রধান এমপি ক্রিসপিন ব্লান্ট বলেন, ‘আমাদের এ পর্যালোচনা পরিপূর্ণ।
মুরসিকে মৌলিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করাই তার অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ হবে। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অমানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নির্দেশ দিচ্ছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট। তিনিই মুরসির মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন।’ কারাগারে মুরসির জন্য প্রদেয় ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য প্যানেলের পক্ষ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিসর কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি দেয়নি বলে জানান ব্লান্ট।
বিভিন্ন এনজিও, যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং স্বাধীন সূত্র থেকে পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে পর্যালোচনা প্যানেল। মুরসির ছেলে আবদুল্লাহ মুরসি বলেন, বাবাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে আমাদের কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা চাই না তিনি কারাগারেই মারা যান।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিসরের সরকারকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানান আবদুল্লাহ। ২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে বিশাল গণঅভ্যুত্থান। এতে পদচ্যুত হন হোসনি মোবারক।
এরপর মিসরের প্রথম অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ব্রাদারহুডের মুরসি। কিন্তু ২০১৩ সালে গণঅসন্তোষের সুযোগ নিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরীয় সেনাবাহিনী। পরে প্রেসিডেন্টের মসনদে বসেন মুরসির হাতে সেনাপ্রধান হওয়া আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।
২০১৩ সালে মুরসির নেতৃত্বাধীন মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অর্থের বিনিময়ে কাতারের কাছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নথি পাচার করেছেন।
২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের জুন মাসে তথ্য পাচারের এ মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন নিম্ন আদালত। আদালত দেশের গুরুত্বপূর্ণ নথি পাচারের অভিযোগে মুরসিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
বিডিপ্রতিদিন/ ই জাহান