ভারতের ইতিহাসে জরুরি অবস্থা একটা কালো দিন বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার মুম্বাইতে জরুরি অবস্থার ৪৩ তম বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে কংগ্রেসকে তোপ দেগে মোদি বলেন গান্ধী পরিবারের ব্যক্তিগত স্বার্থেই গোটা ভারতকে জেলে ভরা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর অভিমত দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করার জন্য নিজেকে পুনরায় সমর্পণ করতেই এই দিনটি পালন করা প্রয়োজন।
মোদি জানান ‘'জরুরি অবস্থা কংগ্রেসের পাপের ফল। আমাদের ইতিহাসে এটা একটা কালো দাগ। কেবলমাত্র কংগ্রেসের সমালোচনা করার জন্যই জরুরি অবস্থার ৪৩ তম বার্ষিকীকে কালা দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে না, বরং সংবিধান ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার ব্যাপারে দেশের যুব সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। কারণ আজকের যুবকদের কোনও ধারণা নেই জরুরি অবস্থার সময় কী ঘটেছিল’।
‘বিজেপির শাসনকালে সংবিধান, দলিত ও সংখ্যালঘুরা বিপদের মধ্যে রয়েছে’ বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে করা এই অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে মোদি বলেন, এই দলটি কোনদিনও উন্নতি করতে পারবে না। নিজেদের স্বার্থের কথা প্রচারের জন্য তারা নিজেদের দলটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে।
কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে মোদি বলেন ‘কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য বিরোধী দলের নেতাদের কারাদণ্ড দিয়ে গোটা দেশটাকেই একটা জেলে পরিণত করে ফেলেছিল। এই দলটার কাছে দেশ এবং গণতন্ত্রের কোন মূল্য নেই। আদালতের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী) পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরিবর্তে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। তবে আজ কেন এই মানুষগুলো (কংগ্রেসের নেতারা) সংবিধান রক্ষার কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখা উচিত জরুরি অবস্থার সময় যখন সঙ্গীতশিল্পী কিশোর কুমার তাদের (কংগ্রেস) হয়ে গান গাইতে অস্বীকার করেন, তখন তার গানগুলো রেডিও-তে বাজানোর অনুমতি দেওয়া হয় নি। এমনকি তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কোন লেখালেখি করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কর্মীদেরকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল’।
কংগ্রসকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘'যখনই এই পরিবার (কংগ্রেস) ক্ষমতা হারানোর ভয় পায়, তখনই তারা দেশ সমস্যার মধ্যে পড়েছে বলে চিৎকার করতে থাকে। লোকসভা ভোটে ৪০০ আসন থেকে ৪৪টি আসনে নেমে আসার পর তারা নির্বাচন কমিশন, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-কে দায়ী করছে। ওরা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব এনে দেশের বিচার বিভাগকে ভয় দেখাতে চাইছে।
এদিকে মোদির এই বক্তব্যের পরই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণ করা হয়েছে। দেশটির সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা আনন্দ শর্মা ট্যুইট করে জানান ‘দেশবাসী আজ যা দেখছে তা হল একজন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী ও ঔদ্ধত সরকারের শাসনকালে সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে চলেছে’। জরুরি অবস্থার সময় (২৫ জুন, ১৯৭৫--২১ মার্চ, ১৯৭৭) ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সর্বোচ্চ নেতা বলে উল্লেখ করে আনন্দ শর্মা বলেন ‘বিজেপি-আরএসএস কখনওই ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতি বা তাঁর শহীদত্ব (মৃত্যু)-কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে পারবে না। দেশের মানুষ সবসময় তাঁকে (ইন্দিরা গান্ধী) একজন নায়ক হিসাবেই মনে রাখবে’।
বিডি প্রতিদিন/২৬ জুন ২০১৮/হিমেল