দীর্ঘ দশ বছর ধরে দিল্লির তিহার জেলে বন্দী বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফারাজির দেশে ফেরার দিন পিছিয়েছে। ২৯ জুনের পরিবর্তে এক সপ্তাহ পিছিয়ে তা করা হয়েছে ৬ জুলাই। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিচারাধীন বা দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ওই দিনই বাদল ফরাজিকে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করা হবে।
ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন বাদল। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তাঁর সংযত ব্যবহার খতিয়ে দেখেই সম্প্রতি তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে অনুমোদন দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী এই প্রথম বারের মতো কোন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীকে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর হতে চলেছে।
বাদলকে হস্তান্তরের বিষয়ে চলতি মাসের গোড়ার দিকেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বাদলকে হস্তান্তরের বিষয়টি দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানানো হয়। এরপরই বাদলকে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও দ্রুত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সেইমতো দুই দেশের সরকারের পক্ষে সিন্ধান্ত হয় যে আগামী ২৭ জুন বাংলাদেশ থেকে দুইটি পুলিশ এসকর্ট টিম দিল্লিতে এসে পৌঁছাবে। এরপর ২৯ জুন বাদলকে নিয়ে এসকর্ট টিম দিল্লি বিমান বন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবার কথা ছিল। বাদলসহ প্রতিনিধি দলের বিমানের টিকিটও কনফার্ম হয়ে যায়। কিন্তু এরপরই হঠাৎ করেই বাদলের দেশের ফেরার দিন পিছিয়ে যায়। ২৯ জুন এর বদলে তা হয় ৬ জুলাই।
সূত্রে খবর ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাদলকে মুক্তির বিষয়ে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অতিরিক্ত সাত দিন সময় লাগবে। তাছাড়া ভারত সরকারের পক্ষেও দিল্লি সরকার, দিল্লির প্রিজন অথরিটি, দিল্লি পুলিশ, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া, ফরেনারস রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে সমস্ত নথি দিয়ে বাদলের মুক্তির বিষয়টি অবগত করতে প্রায় সাত দিনের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে বাদলকে দিল্লির কারাগার থেকে মুক্ত করতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ভারতের সমাজকর্মী রাহুল কাপুরও মঙ্গলবার ফোনে এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন ২৯ জুনের পরিবর্তে আগামী ৬ জুলাই বাদল দেশে ফিরে যাবেন। এব্যাপারে মঙ্গলবারই দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (কাউন্সেলর) মোসারফ হোসেন-এর সাথেও তাঁর সাক্ষাত হয় বলে জানান রাহুল কাপুর।
এদিকে বাদল ফারাজির পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জাানিয়েছেন তার বোন আখলিমা বেগম। বাংলাদেশের উত্তর গুলশানে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটিড’এ আকলিমার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রুপি দিয়ে সহায়তার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, তাজমহল দেখার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ভারতে প্রবেশের পরই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয় বাদল ফারাজি। ভারতের পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রবেশের পরই একটি হত্যা মামলায় আসামি হিসাবে তাকে আটক করে বিএসএফ। ২০০৮ সালে মে মাসে দিল্লির ওমর কলোনিতে এক বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বাদল সিং’এর নামের সাথে মিল থাকার কারণে বাংলাদেশি বাদলকে ওই খুনের মামলায় আটক করা হয় বলে জানা যায়। এরপর ২০১৫ সালের ৭ আগষ্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত, বাদলকে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করা হয়। তার স্থান হয় দিল্লির তিহার কারাগারে। পরবর্তীতে দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও নিম্ন আদালতের সেই রায়কে বহাল রাখে। ফলে গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারেই কাটাতে হচ্ছে বাদল (২৮)-কে।
এরপর কারাগার থেকে বাদলকে মুক্তি দিতে ভারত জুড়ে র্যালি, মানববন্ধনের পাশাপাশি দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-কেও চিঠি দেন সমাজকর্মী রাহুল কাপুর। বাদলের ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে ‘জাস্টিস ফর বাদল’-শীর্ষক একটি অনলাইন পিটিশনেও প্রচারণা চালান রাহুল কাপুর।
বিডি প্রতিদিন/২৭ জুন ২০১৮/হিমেল