আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোরকোর্টে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
এদিকে অনুষ্ঠানে মোদি ছাড়াও আরো বিদায়ী মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যরাও শপথ নিতে পারেন। প্রথাগত ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘দরবার হল’ এ শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান হয়ে থাকলেও এনিয়ে ষষ্ঠ বার কোনো প্রধানমন্ত্রী ‘ফোরকোর্ট’এ শপথ নেবেন। ইতোমধ্যেই সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এবার রেকর্ড সংখ্যায় অতিথি হাজির থাকবেন মোদির শপথ অনুষ্ঠানে।
২০১৪ সালে যেখানে ৫০০০ অতিথি সমাগম হয়েছিল এবার সেখানে সংখ্যাটা প্রায় ৬৫০০ জন।
তবে মোদির সাথে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা কারা স্থান পাবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও সূত্রে খবর মঙ্গলবার দিল্লিতে এক জরুরি বৈঠকে বসেন মোদি ও অমিত শাহ। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে সেই বৈঠক। বৈঠকে পরবর্তী মন্ত্রিসভার রূপরেখা নিয়েই মূলত আলোচনা হয়।
জানা যায়, রাজনাথ সিং, পিযুশ গোয়েল, নির্মলা সীতারামন, স্মৃতি ইরানি, নীতিন গড়করিদের মতো বর্তমান মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের এবারেও রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী তারা। সেই সাথে মন্ত্রিসভায় কিছু নতুন মুখ আনার ব্যাপারে একমত মোদি-অমিত শাহ জুটি। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি ২০১৪ সালে জয়ী ২ টি লোকসভার আসন থেকে একলাফে ১৮ টি আসনে জয় পেয়েছে-সেখান থেকেও আরো বেশি সংখ্যায় মন্ত্রী করা হতে পারে বলে খবর। পাশাপাশি ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-যে রাজ্যগুলোতে বিজেপি এবার ভাল ফল করেছে সেখান থেকেও একাধিক নেতাকে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে।
তবে স্বরাষ্ট্র-অর্থ-পররাষ্ট্র-প্রতিরক্ষা এই চার মন্ত্রণালয় নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে একটি সূত্রে খবর যারা যারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে চলেছেন তাদের প্রত্যেককে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই মোদি নিজে ফোন করে বিষয়টি জানাতে পারেন। অমিত শাহকে মন্ত্রী করা হলে সে ক্ষেত্রে দলের সভাপতি পদে আনা হতে পারে বিদায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার স্বাস্থ্য মন্ত্রী জে.পি.নাড্ডা কিংবা বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক ভুপেন্দ্র যাদবকে।
মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ‘বিমসটেক’ অর্থাৎ ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকনোমিক কোঅপারেশন’ সদস্য ভুক্ত দেশ গুলোর নেতারা। ভারত ছাড়াও বিমসটেক ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভুটান।
এছাড়াও কিরগিজিস্তান গণপ্রজাতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্ট এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকেও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘৩০ মে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার জন্য ভারত সরকারের তরফে বিমস্টেক ভুক্ত সদস্য দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ‘প্রতিবেশী প্রথম’ সরকারের এই নীতিকে সামনে রেখেই এই আমন্ত্রণ।’
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে তেশরিং, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মইথ্রিপলা সিরিসেনা, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি.শর্মা ওলি, কিরগিজিস্তানের প্রেসিডেন্ট সুরনবে জিনবেকভ, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ইউ.উইন.মাইইন্ট, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট প্রভিন্দ কুমার জুগনৌথ, থাইল্যান্ডের বিশেষ দূত গ্রিসাডা বুনার্ক।
বিদেশি রাষ্ট্র নেতাদের পাশাপাশি শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, জেডিএস নেতা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ.ডি.কুমারস্বামী, আপ প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, টিআরসে প্রধান তথা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে.চন্দ্রশেখর রাও, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, জেডিইউ প্রধান ও বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি।
তবে প্রথমে দিল্লিতে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ব্যাপারে মমতা রাজি থাকলেও পরে মত বদলান। আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে কংগ্রেস শাসিত কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, ছত্তিশগড়, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদেরও। যদিও তারা হাজির থাকবেন কি না তা পরিষ্কার নয়।
শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, এআইএডিএমকে নেতা কে.পনিরসলভম, শিরোমণি আকালি দল নেতা প্রকাশ সিং বাদল, লোক জনশক্তি পার্টি প্রধান রাম বিলাশ পাসওয়ানসহ এনডিএ শরিক দলের নেতাদের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি রজনী কান্ত, কমল হাসানের মতো ফিল্ম জগতের ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট থেকে ভারতের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করবে। দুরদর্শনের ইউটিউব চ্যানেলেও এই অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হবে।
মোদি হলেন প্রথম বিজেপি নেতা-যিনি প্রথমবার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল দুই কংগ্রেস নেতার। একজন জওহরলাল নেহেরু, দ্বিতীয় ইন্দিরা গান্ধী। মোদির আগে অটল বিহারী বাজপেয়ী পরপর দুইবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও তার প্রথমবারের মেয়াদ ছিল ১৯ মাস।
উল্লেখ্য, ৫৪৩ আসন বিশিষ্ট ভারতের লোকসভায় ভোট নেওয়া হয়েছে ৫৪২ আসনে (অনিয়মের অভিযোগে ভেলোর আসনটিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে)। এর মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পায় ৩৫২ টি আসন। যার মধ্যে বিজেপি একাই ৩০৩ আসন লাভ করে। বারাণসী থেকে ৪.৭৯ লাখ ভোটে জয়লাভ করেন নরেন্দ্র মোদি। এদিকে শপথ গ্রহণের আগে মা’এর আর্শীবাদ নিতে রবিবার নিজের রাজ্য গুজরাটে যান নরেন্দ্র মোদি। রাতে মা হীরাবেন-এর সাথে সাক্ষাত করে তার থেকে আর্শীবাদ নেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন