আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে আসে গত ১৫ আগস্ট। এরপর দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব পাওয়ায় ফের আলোচনায় চলে এসেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। গেরিলা সশস্ত্রী এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভয়াবহ হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাই তারা আফগানিস্তানের দায়িত্ব অনেকে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানও এ নেটওয়ার্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
১৯৮০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাক্কানি নেটওয়ার্কের পেছনে অর্থ খরচ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো আফগানিস্তানে হামলা চালানো শুরু করে। পরে হাক্কানি নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে লড়াই সামিল হয়। পরে এ নেটওয়োর্কের শীর্ষ নেতাদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর কাবুল শহরের নিরাপত্তার দায়িত্ব এ গোষ্ঠীকেই দিয়েছে তালেবান। অনেকের দাবি, তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক একই গোষ্ঠী। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক দুটি আলাদা গোষ্ঠী।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন। ১৯৮০ সালের দিকে আফগানিস্তানে দখলদার সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী গেরিলা লড়াই চালিয়ে যার উত্থান। সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী লড়াইয়ে কৃত্বিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দেশজুড়েই তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। সে সময় জালালুদ্দিনের গুরুত্ব বাড়ে মার্কিন গোয়েন্দা সিআইএর কাছেও। জালালুদ্দিনের মুজাহিদিন বাহিনীর সদস্যদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। সোভিয়েত শক্তির বিদায়ের পর তার নাম ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিদায় ঘটলে তৈরি হয় তালেবানের সঙ্গে সখ্য। ওই সময়ে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে ওঠে জালালুদ্দিন হাক্কানির। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সে সরকারের মন্ত্রী হন তিনি। মার্কিন মিত্রদের আগ্রাসনে ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান।
মার্কিন সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে গত ২০ বছরে যতগুলো ভয়ংকর হামলা হয়েছে, তার বেশির ভাগের জন্য এ নেটওয়ার্কের কর্মীদের অভিযুক্ত করা হয়। তারা সামরিক ঘাঁটি ও দূতাবাসগুলোতে বড় হামলা চালিয়ে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে।এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হাক্কানির ভাই খলিল হাক্কানিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২০১১ সালে ৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরের বছর হাক্কানি নেটওয়ার্ককে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে। ২০১৮ সালে তালেবানদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যুর খবর স্বীকার করার আগে থেকেই সংগঠনটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান তার ছেলে সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানি ২০১৫ সালে তালেবানের উপনেতার দায়িত্ব পান। এ পদে আছেন মোল্লা ওমরের ছেলেও। হাক্কানির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই আনাস হাক্কানিও। আগের আফগান সরকার যাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। ২০১৯ সালে তিনি মুক্তি পান। বলা হয়, আনাসের মুক্তি তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি আলোচনার সূচনা করে, যা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। ১৫ আগস্ট তালেবানদের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর ফের আলোচনায় আসে হাক্কানি নেটওয়ার্কের নাম। বর্তমানে সরকার গঠনের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় গোষ্ঠীটির বেশ কয়েকজন নেতা। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং দেশটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় দেখা যায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ছোট ভাই আনাস হাক্কানিকে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা