বিচ্ছেদের পরেও ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মনোমালিন্য দূর হচ্ছে না। উত্তর আয়ারল্যান্ডকে কেন্দ্র করে একতরফাভাবে বিচ্ছেদ চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে বরিস জনসনের সরকার।
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা, অনিশ্চয়তা ও দরকষাকষির পর ব্রিটেন ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দ্বিপাক্ষিক বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১১ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ে সব কিছু আগের মতোই ছিল। ২০২১ সালে চূড়ান্তভাবে ইইউ ত্যাগ করে ব্রিটেন। তারপর করোনা সংকটের কালো ছায়ার আড়ালে ব্রেক্সিটের প্রভাব ও পরিণতি ঢাকা পড়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর ব্রিটেনের অর্থনীতি একাধিক সংকট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে ব্রেক্সিটের একটি ক্ষত নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আরও সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ। ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামে বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল। ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে। কিন্তু বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়।
গতকাল সোমবার ব্রিটেনের সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আবারও সতর্ক করে দিয়েছে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের সম্মেলনে ব্রেক্সিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডেভিড ফ্রস্ট জট ছাড়াতে বিকল্প আইনি খসড়া পেশ করার ঘোষণা করেছেন। চলতি মাসের শেষেই সরকার এমন চরম পদক্ষেপ নেবার তোড়জোড় করছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার আগে ব্রাসেলসের সঙ্গে আলোচনা করে শেষ চেষ্টা চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন ফ্রস্ট।
ব্রিটেন ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা কাজে লাগিয়ে এমন একতরফা পদক্ষেপ নিলে তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে ইইউ। ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্যের সরবরাহ আরও সহজ করতে ইইউ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখবে বলে জানিয়েছে। ইইউ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারস সেফকোভিচ জানিয়েছেন, তিনি আগামী সপ্তাহেই সেই প্রস্তাবের খসড়া পেশ করবেন।
কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব না হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইইউ ব্রিটেনের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাতে পারে। ব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য জগত এমন চরম পদক্ষেপ এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেবার আহ্বান জানিয়েছে। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন নয়, ইইউর সঙ্গে সংঘাতের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে মোটেই ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াবেন না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ব্রিটেনের স্বার্থের কতটা ক্ষতি করবে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন