প্যান্ডোরা পেপার্সে উঠে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু হাই প্রোফাইল নেতার নাম। তাদের ঘিরে প্রচুর অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠছে।
প্যান্ডোরা পেপার্স নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ব্রাসেলসে বেশ সতর্ক লাগছিল ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র ডানা স্পিনান্টকে। একের পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছিলেন, ''আপনাদের মতো আমরাও মিডিয়া রিপোর্ট দেখেছি। আমরা কোনো ব্যক্তির নাম নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। কোনো সংস্থাকে নিয়েও জবাব দিতে পারব না।''
সম্ভবত ইউরোপীয় হেলথ ও কনজিউমার পলিসির সাবেক কমিশনার জন ডালিকে নিয়ে এবার উৎসাহ দেখাবে ইইউ। তামাকজাত পণ্য নিয়ে একটা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে ২০১২ সালে তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু সাবেক ইউরোপীয় কমিশনার হিসেবে তিনি পেনশন পান।
ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) রিপোর্ট অনুযায়ী, ডালি তাদের জানিয়েছেন, তিনি ২০০৬ সালে ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপে একটি শেল কোম্পানি খোলেন। কিন্তু তিনি তা ব্যবহার করেননি। তিনি মাল্টার নাগরিক। সে দেশের আইন অনুসারে এই ধরনের কোম্পানি খুললে তা পার্লামেন্টকে জানাতে হয়। কিন্তু তিনি তা জানাননি।
সোমবার ইউরোপীয় কমিশন দাবি করেছিল, গত পাঁচ বছরে কর ফাঁকি রুখতে প্রচুর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কমিশনের মুখপাত্র ড্যানিয়েল ফেরির দাবি, ব্যাংকের গোপনীয়তার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি দেশ তাদের কর বাঁচানোর প্রকল্পগুলি অন্য দেশকে জানায়। মানি লন্ডারিং নিয়ে কড়া মনোভাব দেখানো হয়েছে। শেল কোম্পানিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইন করা হচ্ছে, যাতে এই ফাঁক গলে কর ফাঁকি দেয়া না যায়।
২০১৭ সালে কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যগুলি নিয়ে ইইউ’র নীতি তৈরি হয়। আইসিআইজে পানামা পেপার্স প্রকাশ করার পর। তখনই দেখা গিয়েছিল, রাজনীতিক, শিল্পপতি, অভিনেতা, ক্রীড়াবিদ, বিত্তবানরা কীভাবে বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকি দেন। ইইউ কিছু দেশের তালিকা তৈরি করেছে, যা কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য।
জার্মানির গ্রিন পার্টির নেতা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য স্বেন গিগোল্ড বলেছেন, ''ইইউ যে তালিকা তৈরি করেছে, তা দিয়ে কর ফাঁকি বন্ধ করা যাবে না। অনেকগুলি দেশের নাম এই তালিকয় নেই।''
গিগোল্ড বলেছেন, ''কর ফাঁকি বন্ধ করতে আরো কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। ইইউ অর্থমন্ত্রীরা তলিকা থেকে কিছু দেশের নাম বাদ দিয়েছেন, এটা মেনে নেয়া যায় না।''
সিএসইউ নেতা মার্কুস ফার্বার মনে করেন, ''ইইউ পার্লামেন্ট যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। তালিকা আছে। কিন্তু সেটা কাগুজে বাঘ হয়েই থেকে গেছে। তার মতে, কর ফাঁকি রুখতে গেলে কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে।''
খুব দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের কোনো রাস্তা নেই। অক্টোবরের শেষে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলির উপর গ্লোবাল মিনিমাম ট্যাক্স বসানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর ফলেও দ্রুত কোনো সমাধান হবে না।
কারণ এই পরিকল্পিত কর ট্যাক্স হেভেনগুলির উপর ২০২৩ সালে প্রযোজ্য হবে। এবং এই কর প্রচুর ব্যক্তি ও সংস্থার উপর প্রযোজ্য হবে না। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের মতো ব্যক্তিরাও এই করের আওতায় আসবেন না। প্যান্ডোরা পেপার্সে তাদের নাম আছে। ২০১৭ সালে শেল কোম্পানির মাধ্যমে লন্ডনে বাড়ি কিনে ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী তিন লাখ পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বাবিসও শেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পত্তি কিনেছিলেন বলে অভিযোগ। তিনিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইইউ’র কিছু নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কর ফাঁকির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়। মাল্টা ও সাইপ্রাস হলো কর ফাঁকির অন্যতম বড় কেন্দ্র। তারা ইইউ’র সদস্য। আবার ইইউ’র ঘনিষ্ঠ দেশ আমেরিকায় প্রচুর শেল কোম্পানি, হোল্ডিং, ট্রাস্ট আছে বলে প্যান্ডোরা পেপার্সে জানিয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন