সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের হুমকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য বেড়েছে। ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর জন্য ইহুদিবাদী ইসরায়েল বাজেট তৈরি করছে বলে তাদের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ইসরায়েলি এ হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, 'ইরানের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর জন্য দেড়শ’ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ দেয়ার পরিবর্তে ইসরায়েলের উচিত ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ক্ষতি কাটিয়ে নিজের পুনর্গঠনের জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ দেয়া।'
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গত এক দশকে ইরানের বিরুদ্ধে বহুবার হুমকি দিয়েছেন। যদিও তারা জানে যে ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই এবং কোনো হুমকিই তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তারপরও যদি তারা ইরানের বিরুদ্ধে সামান্যতম আগ্রাসনের দুঃসাহস দেখায় তাহলে কঠিন জবাব পাবে যার ফলে ইসরাইল ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। আর এটা উপলব্ধি করেই ইসরাইল অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ইরানকে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের নতুন কর্মকৌশল তুলে ধরেন। অনেক বড় পরিসরে যুদ্ধে জড়াবার পরিবর্তে ছোট পরিসরে ইরানে সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এর পাশাপাশি তেহরানের ওপর প্রচণ্ড কূটনৈতিক চাপও বৃদ্ধির কথা বলেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ব্যাপারে ইসরায়েলের এসব বাগাড়ম্বরের আলোকে দুটি জরুরি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমত, ইসরায়েলের এসব কথাবার্তা ও হুমকি আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং ইসরাইলের এ আচরণের ব্যাপারে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মজিদ তাখতে রাভানচি সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছেন, ইরানের মতো জাতিসংঘের সদস্য একটি দেশের বিরুদ্ধে ইসরাইলের একের পর এক হুমকি আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ ইশতেহারের লঙ্ঘন।
দ্বিতীয়ত, ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো সামরিক আগ্রাসনের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে ইসরায়েলকে। আর এটা বুঝতে পেরেই ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির মার্কিন প্রচেষ্টা অচলাবস্থার সম্মুখীন হওয়ায় ইসরায়েল খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কেননা ইরানের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এ অবস্থায় ইসরায়েল যদি ভেবে থাকে যে নতুন নতুন নাটক সাজিয়ে ইরানকে বেকায়দায় ফেলতে পারবে তাহলে তারা ভুল করবে। ইরানকে পরীক্ষা করার চরম মূল্য দিতে হবে ইসরাইলকে। ইসরাইল এই ঝুঁকি নিতে গেলে তারা ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠেছে এবং তারা যেভাবে ইসরাইলকে পাল্টা জবাব দিচ্ছে তাতে ইসরাইল চিন্তিত না হয়ে পারে না। বলা যায় প্রতিরোধ শক্তির কারণে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে এবং কিছুই ইসরায়েলের অনুকূলে নেই। সুতরাং ইসরায়েলের যে কোনো আগ্রাসন এখন আর বিনা জবাবে পার পাবে না। তাই ইরানকে হুমকি দিয়ে তাদের কোনো লাভ হবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।-পার্সটুডে
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত