পাকিস্তানে বর্তমানে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টে ভেঙে দিলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার পুনর্বহাল হয়। এরপর শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর গভীর রাতে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধীরা। অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ায় রবিবারই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এর আগে ইমরান অভিযোগ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে হঁটানোর জন্য বিরোধী দলগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে। আর বিরোধী দলগুলো নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির আশায় সেই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে।
তার এই অভিযোগ উপমহাদেশের ইতিহাসের দুই চরিত্র টিপু সুলতান ও নবাব সিরাজ উদ–দৌলার কথা মনে করিয়ে দেয়। তারা দু’জনই দেশপ্রেমিক ছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছেন তারা। ইমরান খান যদি রাজনীতির মাঠে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে না পারেন তবে অনেকেই হয়তো তাকে টিপু সুলতান কিংবা সিরাজের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করবেন।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘ডন নিউজ’ এর একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরা হয়েছে। ‘দ্য প্রমিজ অব ইমরান খান’ নামে ওই প্রতিবেদনটি লিখেছেন ‘জাইঘাম খান’।
এতে তিনি লিখেছেন, দেশে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা সৃষ্টি ও সংবিধান লংঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন এক সময়ের ক্রিকটার ইমরান খান।
এক সময় মনে করা হচ্ছিল, রাজনৈতিক বিরোধীদের বেশ কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম হয়েছেন ইমরান খান। তখন মনে করা হয়েছিল, ইমরানের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে বিরোধীদের অনেক বেগ পেতে হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো। বিরোধীরা শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, একজোট হয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে ছুঁড়ে ফেলেছেন।
এদিকে, ইমরান খান দেশের কোনও খাতেই সংস্কারের ছোঁয়া রেখে যাননি। যদিও ক্ষমতায় আসার আগে তিনি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। বস্তুত তার আমলে রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভ– আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব হয়েছে। তাই ইমরান খানের পর যিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে।
পরিবর্তনের শ্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। কিন্তু তার আমলে পাকিস্তানের অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না। ইমরান সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা লাখ লাখ পাকিস্তানিকে দরিদ্র সীমার নিচে নিয়ে গেছে। ইমরান ক্ষমতায় আসার বছর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের মোট দেশজ উৎপাদন ছিল ৩১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালে তা ২৯ হাজার ২০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ সময় ইমরানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, পাকিস্তান নরওয়ে কিংবা ডেনমার্ক হয়নি। বরং পাকিস্তানিদের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের তুলায়ও কমেছে।
ইমরান খান ঘোষণা দিয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার। শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতিবাজ দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় ২০১৮ সালে পাকিস্তান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪০তম ছিল। সর্বশেষ তালিকায় দেশটির অবস্থান ১২৪। এক্ষেত্রে ধীরে হলেও পরিবর্তনের পথে হাঁটছিলেন ইমরান খান।
তার এই পরিণতি কীভাবে হল? এ বিষয়ে জানতে হলে চলুন ইমরান খানের রাজনৈতিক উত্থান ও যাত্রা পথ নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
বাইশ গজ থেকে রাজনীতির মাঠে
১৯৯২ সাল, অবিস্মরণীয় একটি ইমরান খানের জীবনে। বলা যায়, এটিই তার জীবনের অন্যতম সেরা একটি বছর। বয়স ৪০ বছর ছুঁতে যাওয়া ইমরানের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতে নেয় পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দেশ–বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা ইমরানের। বিশ্বকাপ জয়ের পর খেলা থেকে অবসর নেন তিনি। ওই সময়ই জীবনে নতুন একটি অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয় তার। তা হলো– রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা। স্বপ্ন ছিল, একদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তহবিল গঠনে নামেন ইমরান খান। উদ্দেশ্য ছিল, তার মায়ের নামে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা। এর আগে ১৯৮৫ সালে তার মা শওকত খানম ক্যান্সারে মারা যান। তার তহবিলে লাখ লাখ মানুষ অর্থ দান করেন। ওই সময় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। পরবর্তীতে নওয়াজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। ইমরানের ক্যান্সার হাসপাতাল চালু করতে ব্যাপক সহায়তা ও অর্থ প্রদান করেছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে হাসপাতালটি চালু হয়।
ওই সময় ইমরান খানকে অনেকেই ‘বয়স্ক বাঘ’ বলতে শুরু করেন। কেননা তিনি বয়সের কারণে ইতিমধ্যে খেলা ছেড়েছেন। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনছেন ব্যক্তি জীবনেও। খেলোয়াড় জীবনে ইউরোপীয় ভাবাদর্শের ইমরানের ‘প্লে বয়’ ইমেজ ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে এসে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ইমরান কয়েক দশকের ওই ভাবমূর্তি পুরোপুরি বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন।
ইমরান বিশ্বাস করতেন, আধুনিক শিক্ষা তাকে পশ্চিমের দেশগুলোর উন্নয়ন প্রক্রিয়া বুঝতে সহায়তা করেছে। সে অনুযায়ী তিনি পাকিস্তানের পরিবর্তন আনার পথ খোঁজেন। তার এমন মনোভাব সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ইমরান সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। তখনই পাকিস্তানের মানুষ বুঝেছিল, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ নিয়ে ইমরান রাজনীতি শুরু করছেন।
যেভাবে দল গঠনের সূচনা
১৯৯৪ সালের শেষ দিকে যখন ইমরান খানের সমর্থকরা অপেক্ষা করছিলেন যে তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেবেন। সে সময় ইমরান মৈত্রী গড়ে তোলেন জেনারেল হামিদ গুল ও মোহাম্মদ আলি দুররানির সঙ্গে। হামিদ গুল পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। আর আলি দুররানি জামাতে ইসলামের তরুণ শাখা ‘পাসবান’–এর প্রধান ছিলেন। আফগান জিহাদিদের সঙ্গে দু’জনেরই সুসম্পর্ক ছিল।
তবে রাজনৈতিক দল গঠনের আগের এই মৈত্রী প্রায় তিন দশক ধরে ইমরানকে ভুগিয়েছে। দেশে–বিদেশে তার নামে একটি রটনা রটে, ইমরানের সঙ্গে পাক সেনাবাহিনীর সখ্য রয়েছে। এমনকি ক্ষমতায় আসার আগ মুহূর্তে রটেছিল, ইমরান খান সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি ‘পুতুল সরকারের’ প্রধান হবেন। আসল ক্ষমতা পর্দার আড়ালে থাকা সেনাবাহিনীর হাতে থাকবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ইমরান নিজেও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
যদিও ওই সময় ইমরান বুঝেছিলেন, আসল পরিবর্তন আনতে গেলে পাকিস্তানিদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত ক্ষমতার সুবিধা ভোগ করা অভিজাতদের প্রভাব কমাতে হবে। তাই তিনি মধ্যবিত্তদের রাজনীতি সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যবিত্তদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।
১৯৯৫ সালে ইমরানের ব্যক্তিজীবনে বড় পরিবর্তন আসে। তিনি বিয়ে করেন জেমিমা গোল্ডস্মিথকে। ২২ বছর বয়সী জেমিমা যুক্তরাজ্যের একজন ধনকুবেরের মেয়ে। এরপরের বছর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা। রাজনৈতিক দল গঠন করেন ইমরান। নাম দেন পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই)।
হতাশায় ডুবেছিল প্রথম নির্বাচনে
শুরুটা ভালো ছিল না ইমরান খানের রাজনীতির মাঠের অভিজ্ঞতা। রাজনৈতিক দল গঠনের এক বছরের মাথায় সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন ইমরান। উচ্চাশা ছিল অনেক, তবে ফলাফল হতাশাজনক। একটি আসনেও জিততে পারেনি পিটিআই। ওই নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন) ইমরানের নতুন দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গড়তে চেয়েছিল। ৩০টি আসনে পিটিআইয়ের প্রার্থীদের সমর্থন দিতে চেয়েছিল। তবে ইমরান সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফলাফল পিটিআই পায় মোট ভোটের মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। আসন শুন্য। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের পিএমএল–এন ও বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) যথাক্রমে ৪৬ শতাংশ ও ২২ শতাংশ ভোট পায়।
ইমরান খান ১৯৯৯ সালে আল্লামা তাহিরুল কাদরির নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী ইত্তেহাদে যুক্ত হন। পিপিপিসহ ১৯টি বিরোধী দলের জোট ছিল এটি। এরপরেই পাকিস্তানে সেনা অভ্যুত্থান ঘটে। ক্ষমতায় বসেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। রাজনীতিকদের অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে রাজনীতিকদের সুযোগ দেন মোশাররফ। নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি। ওই সময় গোয়েন্দারা পারভেজ মোশাররফকে বলেছিল, নির্বাচনে পিটিআই ১০টির বেশি আসন পাবে না। এরপরেও ইমরান খানকে ৩০টি আসন দিয়ে তার সঙ্গে জোট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেনাশাসক মোশাররফ।
অন্যদিকে ইমরানের ধারণা ছিল, তার দল শতাধিক আসনে জিতবে। তাই সেনাশাসকের ওই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। ভোটের ফলে দেখা যায়, পিটিআই মাত্র দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। দলভিত্তিক হিসেবে পিটিআইয়ের অবস্থান ১০। ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করে পিপিপি। মুসলিম লিগ–কায়েদ (পিএমএল–কিউ) পায় ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে পিএমএল–এন পায় ৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। মোশাররফের আমলের ওই নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যান ইমরান। ওই সময় নবগঠিত পিএমএল–কিউ সরকার গঠন করে।
যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু
পরিবর্তনের শ্লোগান নিয়ে শুরু করলেও শুরুতে ধুঁকতে হয়েছে ইমরানের দল পিটিআইকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পিপিপি সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ইমরানের দল। একইসঙ্গে পাঞ্জাবে জোট সরকারের সঙ্গী হয় পিটিআই।
কেন্দ্রে পিপিপি সরকার বেশ সমালোচিত হয়। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অভিযোগ ডালপালা মেলেছিল। এমনকি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ায় পিপিপি সরকার। তবে সব ছাপিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় বেনজির ভুট্টোর নিহত হওয়ার ঘটনা পিপিপিকে চরম সংকটে ফেলে দেয়। দলটি একজন ‘ক্যারিশমাটিক’ নেতাকে হারায়।
এ সুযোগ কাজে লাগান ইমরান খান। জনগণের কাছে আগে থেকেই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। এবার তরুণদের মন জয়ের উদ্যোগ নিতে শুরু করেন তিনি। গত দশকে পাকিস্তানে তরুণ ভোটারদের সংখ্যাও বাড়ছিল। ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি: রাইজ টু পাওয়ার’ নামে একটি বই লিখেছেন ফিলিপ ই জোনস। ওই বইয়ে তিনি লিখেছেন, সামাজিক পরিবর্তনে পিপিপির তুলনায় পিটিআইয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
পিপিপির নেতাদের বেশির ভাগ সামন্তবাদী। অন্যদিকে পিটিআইয়ের যাত্রা শুরু হয় নব্য উদারবাদী পুঁজিবাদের আমলে। তাই সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের যাত্রা দলটির নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, যা তরুণ ভোটারদের মন জয়ে কাজে লেগেছে। এর ফল আসে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে। পার্লামেন্টে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পায় পিটিআই। ১৪৯টি আসনে এককভাবে জয় পায় দলটি। রাজনীতিতে আসার প্রায় দুই যুগ পর দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। তবে তাঁর নেতৃত্ব এতোটাই প্রবল যে, দলে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি হয়নি। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআই মানেই ইমরান খান আর ইমরান খান মানেই পিটিআই।
নতুন পাকিস্তান গড়ার স্বপ্ন
২০১৩ সালের পর থেকে পিটিআইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরবর্তী সময়ে ইমরান খান পাকিস্তানের সব সমস্যাকে একক ট্যাগলাইন ‘দুর্নীতিতে’ আটকে ফেলেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো ‘ক্রুসেড’ শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। এই লড়াইয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমও তার পাশে দাঁড়ায়। বলা হয়, ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ হবে নৈতিকভাবে মদিনা আর উন্নয়নের দিক থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর (নরওয়ে, ডেনমার্ক) মতো। আরও বলা হয়, ক্ষমতার কেন্দ্রে যদি একজন যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত নেতা থাকেন, তাহলে পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্নীতিমুক্ত থাকবে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
কিন্তু ইমরানের আমলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। পরিবর্তন আসেনি। বরং ইমরানের আশপাশের লোকজনের নামে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেননি ইমরান। এমনকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সূচকেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারেনি পাকিস্তান। দেশের অর্থনীতিও ক্রমশ ধুঁকতে শুরু করে। পাকিস্তানকে বাঁচাতে সৌদি আরব ও চীনের দ্বারস্থ হতে হয় ইমরান খানকে। অর্থনৈতিক সংকটই ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বড় অস্ত্র হয়ে ওঠে।
ইমরানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব তোলার বিষয়ে নজিরবিহীন ঐক্য দেখিয়েছেন বিরোধীরা। তবে প্রস্তাব উত্থাপনের পর থেকে নতুন একটি অভিযোগ সামনে আনেন ইমরান খান। তিনি বলতে শুরু করেন, শুধু দেশীয় বিরোধীরাই নয়, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিদেশিরা। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের রাজনীতি এর আগেও অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এটা সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিযোগ।
এই অভিযোগ সামনে এনে গদি রক্ষা করতে চেয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে সফল হতে পারেনি তিনি। এর পেছনে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। পার্লামেন্টে মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে।
তবে এখনও সুযোগ রয়েছে ইমরান খানের সামনে। আপাতত তার কৌশলের সেই আগাম নির্বাচন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাতিল হলেও আগামী বছর পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে যদি জনগণ চায় তাহলে আবারও তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেন। এ রকম ইতিহাস পাকিস্তানে আগেও ঘটেছে। অন্যথায়, ইমরান খানও অনেকের চোখে টিপু সুলতান বা নবাব সিরাজ উদ–দৌলার মতো একজন হয়ে উঠবেন। সূত্র: ডন নিউজ
বিডি প্রতিদিন/কালাম