ইউক্রেন সংকটের মাঝে জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে ওলাফ শলৎস জোরালো হাতে দেশের হাল ধরার বদলে আড়ালে থাকছেন, এমন একটা ধারণা দেখা দিয়েছিল। তার নিজের সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল অতীতে রাশিয়া তথা সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তুষ্ট করে এসেছে, এমন অভিযোগ বেড়ে চলছিল। কঠিন সময়ে ইউক্রেনকে দ্রুত ভারী অস্ত্র সরবরাহ সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্তের অভাবও জার্মানিতে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এক জনমত সমীক্ষায় প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ দেশের জন্য কঠিন সময়ে চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎসের জোরালো নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জনসমক্ষে বক্তব্য রাখলেন জার্মান চ্যান্সেলর। ইউক্রেনের জন্য ধারাবাহিক সহায়তার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ জি-সেভেন শীর্ষ নেতা, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল এবং ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে ডুডা এবং রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইয়োহানিসের সঙ্গে আলোচনার পর শলৎস নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরেন।
শলৎস মনে করিয়ে দিলেন, যে সরকার প্রধান হিসেবে তিনি সবার আগে জার্মানির স্বার্থ রক্ষার শপথ নিয়েছেন। তার দেশ ও সামরিক জোট ন্যাটো যাতে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর তিনি। ইউক্রেনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তিনি বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের বদলে ন্যাটোসহ সব সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেছেন বলে দাবি করেন জার্মান চ্যান্সেলর।
এ প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানির নিজস্ব দুর্বলতারও উল্লেখ করেন শলৎস। তার মতে, জার্মান সেনাবাহিনীর অস্ত্র ও সরঞ্জাম থেকে যতটা সম্ভব ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এবার জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো থেকে সরাসরি অস্ত্র কিনতে পারবে ইউক্রেন। জার্মান সরকার সেই আর্থিক মূল্য চোকাবে। সরকার জার্মান অস্ত্র শিল্পজগতকে সেই মর্মে একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছে। অবিলম্বে ইউক্রেনকে কী পাঠানো সম্ভব, সেই তালিকায় সেই অস্ত্র ও সরঞ্জাম স্থান পাবে। ইউক্রেনের সরকার সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
শলৎস বলেন, এভাবে ট্যাংক ও বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র, গোলাবারুদ ইত্যাদি দ্রুত সরবরাহ করা যাবে। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মজুত সোভিয়েত জমানায় তৈরি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনের হাতে তুলে দেবার উদ্যোগের কথা জানান তিনি। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সেগুলো সহজেই কাজে লাগাতে পারবে।
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস অবশ্য বেশ কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রেখে দিলেন। জার্মানি থেকে সরাসরি ইউক্রেনে আদৌ ভারি অস্ত্র পাঠানো হবে কিনা, তা এখনো জানা গেল না। প্রতিটি অস্ত্রের ক্ষেত্রে সরকারের ছাড়পত্র লাগবে, নাকি ইউক্রেন জার্মানি থেকে পছন্দমতো অস্ত্র কিনতে পারবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ এমন অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শলৎস প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহায়তার আশ্বাস দিলেও কোথায় সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তাও স্পষ্ট নয়।
জার্মানির বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের মতে, শলৎস ইউক্রেনের জন্য সহায়তার ঘোষণা করতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। তাছাড়া সে বিষয়ে খুব কম তথ্য জানা গেছে। বিপদের সময়ে ইউক্রেনকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখার অভিযোগ করছেন কয়েকজন নেতা। সরকারি জোটের মধ্যেও জার্মানির আরও স্পষ্ট ও সাহসী পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়ছে। দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে সরকারের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। সূত্র: ডয়েচে ভেলে, ডেইলি মেইল
বিডি প্রতিদিন/কালাম