একের পর এক সংকট সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে ইউরোপ। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ভবিষ্যতের জন্য আরও মজবুত করে তুলতে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন। এজন্য ইউরোপে ঢালাও সংস্কারের আহ্বান জানালেন জার্মান চান্সেলর ওলাফ শলৎস।
বিশেষ করে ‘নব্য ঔপিনেবেশবাদী স্বৈরশাসন’-এর মুখে ইউরোপের সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা প্রতিহত করতে তিনি ইউরোপীয় স্তরে প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে এক ভাষণে জার্মান চ্যান্সেলর মনে করিয়ে দেন, যে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা শুরু হবার ঠিক পরেই ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এক ‘যুগান্তকারী মুহূর্ত'-এর কথা বলেছিলেন। তার মতে, ইউক্রেনের উপর নৃশংস আক্রমণ আসলে ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর উপরেও আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
শলৎস আরও বলেন, ভবিষ্যতে মুক্ত ইউরোপ ও ‘নব্য ঔপনিবেশবাদী স্বৈরতন্ত্র'-এর মধ্যে সীমারাখা ঠিক কোথায় হবে, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে।
এমন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হলে শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় আমূল পরিবর্তনের পক্ষেও অভিমত ব্যক্ত করেন জার্মান চ্যান্সেলর। যেমন বর্তমানে প্রত্যেকটি সদস্য দেশের সম্মতি ছাড়া অনেক সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়ার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত থমকে যায়। তাই ভবিষ্যতে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে অভিমত দেন জার্মান চ্যান্সেলর। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারও প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। শলৎস বলকান অঞ্চলসহ ইউক্রেন ও অন্যান্য কিছু দেশকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে স্বাগত জানানোর উপরও জোর দেন।
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউরোপের প্রতিরক্ষা আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে জার্মানি জোরালো ভূমিকা নেবে বলে আশ্বাস দেন জার্মান চ্যান্সেলর। বিশেষ করে কিছু ক্ষেত্রে এতকালের ঘাটতি মেটানো জরুরি হয়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন। জার্মানি আকাশসীমা মজবুত করতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলোও তাতে শামিল হতে পারে, বলেন শলৎস। তার মতে, এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় স্তরে যৌথ উদ্যোগ আরও কার্যকর হবে। উল্লেখ্য, জার্মান সেনাবাহিনী ইসরায়েল থেকে ‘অ্যারো ৩’ নামের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।
ওলাফ শলৎস দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা মজবুত করার পক্ষেও মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে জার্মানির বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন। আগামী ২৫ অক্টোবর বার্লিনে ইউক্রেনের পুনর্গঠন সংক্রান্ত এক সম্মেলনের ঘোষণা করেন শলৎস।
শুধু রাশিয়া নয়, চীনের সঙ্গে আমেরিকার বেড়ে চলা উত্তেজনা সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন শলৎস। মার্কিন প্রশাসন সেই পরিস্থিতি সামাল দিকে ব্যস্ত থাকায় ইউরোপকে অন্যের ভরসায় না থেকে নিজস্ব শক্তি আরও বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/কালাম