জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে গরুর ঢেকুর ও পায়ুপথে বায়ু নিঃসরণের ওপর কর আরোপ করতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড সরকার। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা রোধে সম্ভবত এটিই হবে বিশ্বে এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের নতুন জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্রস্তাবে এ কর আরোপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবটির লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডের কৃষিশিল্প থেকে আসা ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন মোকাবিলা করা।
নিউজিল্যান্ড সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশটির কৃষকদের মালিকানাধীন গবাদিপশু থেকে নির্গত গ্যাসের জন্য অর্থ (কর) দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে গবাদিপশুর মূত্র থেকে আসা নাইট্রাস অক্সাইড এবং গরুর ঢেকুর ও পায়ুপথ থেকে নির্গত বায়ু থেকে আসা মিথেন গ্যাস।
মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য কতটা বিপর্যকর?
কার্বন ডাই-অক্সাইডের পর সবচেয়ে ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন। বায়ুমণ্ডলে এ গ্যাসের মাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে। মিথেনের আধিক্য জ্বালানি হিসেবে গ্যাসটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ফলে নানা উৎস থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে, যা পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি বয়ে আনছে।
সম্প্রতি মার্কিন সরকারের তথ্যে বলা হয়, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো ২০২১ সালে বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যাটমোসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ১৭ পিপিবি (পার্টস পার বিলিয়ন) বেড়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত বছর মিথেনের পিপিবি সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে সর্বোচ্চ পিপিবি ছিল ২০২০ সালে। ওই বছর মিথেনের মাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৩ পিপিবি।
জীবাশ্ম জ্বালনি পোড়ালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ হয়। বিষাক্ত এ গ্যাসের স্থায়িত্ব বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘ হলেও মিথেনের স্থায়িত্ব তুলনামূলক কম। এ সত্ত্বেও অন্যান্য গ্রিনহাউজ গ্যাসের মতোই মিথেন ক্ষতিকর। পরিবেশবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে মিথেন গ্যাসের প্রভাবও রয়েছে। এছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় মিথেন
গ্যাস উষ্ণতা ধরে রাখতে ২৫ গুণ শক্তিশালী। জলবায়ু সংকটের অন্যতম এক স্বল্পমেয়াদি প্রধান প্রভাবক হিসেবে মিথেনের নাম বলা যায় প্রথম সারিতে রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে মিথেনের মাত্রা কমানো সম্ভব হলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানো যেতে পারে। তবে বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণ মিথেন গ্যাস বৃদ্ধি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তেল ও গ্যাস কূপ খনন কার্যক্রমে মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে এনওএএর প্রশাসক রিক স্পিনরাড বলেন, আমাদের তথ্য বলছে, খুব দ্রুতগতিতে বৈশ্বিক গ্যাস নিঃসরণ বেড়ে চলছে। এ তথ্য অনস্বীকার্য ও উদ্বেগজনক।
বিভিন্ন উৎস থেকে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয়। জলাভূমিতে জৈব পদার্থ ক্ষয় থেকে শুরু করে গরুর ঢেকুর থেকেও বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। এনওএএ বলছে, এক-তৃতীয়াংশ মিথেন নিঃসরণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বলানি। তেল ও গ্যাস কূপ খননের সময় প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সম্প্রতি জাতিসংঘ একটি জলবায়ু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক তাপমাত্রার উচ্চবৃদ্ধি ঠেকাতে এক-তৃতীয়াংশ মিথেন নিঃসরণ কমাতে হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মিথেন নিঃসরণ কমালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানো সম্ভব।
রিক স্পিনরাড বলেন, স্বল্পমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ ঠেকানো আমাদের জন্য হাতিয়ারস্বরূপ। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের হারও কমবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক। মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটিজ ক্লাইমেট ল ইনস্টিটিউটের পরিচালক কেসি সিগেল বলেন, যেসব সংস্থা মিথেন নিঃসরণ করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করছে, তাদের আয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মিথেন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যয় করা দরকার। সত্যিকার অর্থে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি কমাতে হবে। বৈশ্বিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমানো অন্যতম একটি উদ্যোগ। তা না হলে বিপর্যস্ত পথ ধরে এক অপরিচিত পৃথিবীর দিকে আমরা অগ্রসর হব। সূত্র: এনওএএ, সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/কালাম