ক্রিমিয়ার সাথে সংযোগকারী একমাত্র সেতুটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মধ্যে মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া।
গত শনিবার বড় ধরনের এক বিস্ফোরণে সেতুটির কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। কর্মকর্তারা বলছেন, এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এই আক্রমণের জন্য রাশিয়া ইউক্রেনকে দায়ী করেছে। কিন্তু কিয়েভ যে এর পেছনে আছে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সে কথা স্বীকার করেনি।
এই কার্চ সেতুটি ১২ মাইল লম্বা যা ইউরোপের সবচেয়ে বড় সেতু। ইউক্রেনের দক্ষিণে যুদ্ধরত রুশ সৈন্যদের কাছে রসদ সরবরাহের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। ফলে ইউক্রেন বাহিনীর জন্য এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক টার্গেট।
বিস্ফোরণে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে এর ওপর দিয়ে ভারী পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। বলা হচ্ছে, বিস্ফোরণে সেতুর চারটি রাস্তার মাঝখানের দুটোর কিছু অংশ ভেঙে সমুদ্রে পড়ে গেছে। এতে রেললাইনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে লরি চলাচলের জন্য ফেরি ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে। তবে সেতুটি রেলসহ হালকা গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
রুশ সরকারের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে সেতুটি মেরামত করার জন্য 'নিঝনিয়ানকার্স্কট্রান্সটরি' নামে একটি ঠিকাদার কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এজন্য একটি সময়সীমাও বেধে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, "এই সেতুটি মেরামতের কাজ ২০২৩ সালের ১ জুলাই-এর মধ্যে শেষ করতে হবে।"
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার চার বছর পর ২০১৮ সালে এই সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন। সেতুটি ক্রিমিয়ার পূর্বাঞ্চলকে দক্ষিণ রাশিয়ার তামান উপদ্বীপের সাথে যুক্ত করেছে। এই কার্চ ব্রিজটিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শাসনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
রাশিয়ার গণমাধ্যম সবসময় এই সেতুটিকে "শতাব্দীর সেরা নির্মাণকাজ" হিসেবে প্রশংসা করে আসছিল। এই সেতুর ওপরে শনিবারের বিস্ফোরণের ঘটনাকে পুতিন ইউক্রেনের "সন্ত্রাসী কাজ" বলে উল্লেখ করেছেন।
আক্রমণের পর ইউক্রেনের কর্মকর্তারা উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক এক টুইট বার্তায় লিখেন: "ক্রিমিয়ার সেতু দিয়ে শুরু।"
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্চ সেতুর ওপর বিস্ফোরণকে কৃষ্ণসাগরে রুশ রণতরীর বহর মস্কোভার ডুবে যাবার সাথে তুলনা করে বলেছে, "ইউক্রেনে রুশ শক্তিমত্তার দুটি কুখ্যাত প্রতীক ধ্বংস হয়েছে।" কিন্তু পরে কিয়েভ সরকার সেতুর ওপর এই হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে।
হামলার প্রতিশোধ নিতে রাশিয়া গত সোমবার ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যাতে রাজধানী কিয়েভসহ বড় বড় শহরের জ্বালানি অবকাঠামোকে টার্গেট করা হয়। এসব হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারান।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক সপ্তাহ আগেই এসব হামলার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন