সুদানে কলেরার প্রাদুর্ভাবে কয়েক সপ্তাহে ২২ জন মারা গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরও শত শত মানুষ। আফ্রিকার দেশটি ১৬ মাস ধরে চলা সংঘাত ও ভয়াবহ বন্যায় বিধস্ত।
সুদানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাইথাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কলেরায় গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ২২ জন মারা গেছেন এবং ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ রোগে নিহত বা আক্রান্তের মোট সংখ্যা জানাননি ইব্রাহিম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে, চলতি বছর ২৮ জুলাই পর্যন্ত সুদানে কলেরায় ৭৮ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৪০০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কলেরা একটি দ্রুত বিকাশমান, অত্যন্ত সংক্রামক রোগ যা ডায়রিয়ার কারণ হয়, যার ফলে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন এবং চিকিৎসা না করা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য মৃত্যু হতে পারে। এটি দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সুদানে গত বছরের এপ্রিল থেকে সামরিক বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে কলেরার প্রাদুর্ভাব সুদানের জন্য সর্বশেষ বিপর্যয়।
সামরিক এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যেকার সংঘাত রাজধানী খার্তুম এবং অন্যান্য শহরাঞ্চলকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে, বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
সুদানের সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকট তৈরি করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন অনুসারে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১০.৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে ২ মিলিয়নেরও বেশি প্রতিবেশী দেশে পালিয়েছে।
সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যেকার এই যুদ্ধে গণধর্ষণ এবং জাতিগতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সুদানে সাম্প্রতিক সপ্তাহেগুলোতে ভয়াবহ বন্যা দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এবারের বন্যায় ১৮টি প্রদেশের ১২টি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলো মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, বন্যার ফলে এক লাখ ১৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
সুদানে কলেরা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর আগে ২০১৭ সালে দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ৭০০ জন মারা গিয়েছিল এবং প্রায় ২২ হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ বলেন, পূর্বাঞ্চলীয় কাসালা প্রদেশে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর পাঁচটি প্রদেশের নয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, আক্রান্তদের বেশিরভাগই টিকা নেননি। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন সুদানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও অংশীদারদের সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করছে। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
বিডি প্রতিদিন/একেএ