পুনেতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের এক মন্তব্য নতুন করে নজর কাড়ছে। পুনের ওই অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত মন্তব্য করেছিলেন,'আমরা ঈশ্বর হয়ে গিয়েছি কি না, তা মানুষ বুঝে নিক, নিজের থেকে আমাদের ঘোষণা করা উচিত নয় যে আমরা ঈশ্বর হয়ে গিয়েছি।'
লোকসভা ভোটের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বলে জাহির করেছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, বারবার জনতাকে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘তিনি ঈশ্বর! তিনিই পরমাত্মা!’ তিনি বলেছেন, ‘কেউ আমাকে মূর্খ বা পাগল ভাবতে পারেন। কিন্তু আমি জানি, আমি ঈশ্বরপ্রেরিত।’ সে কথা নিয়ে তখন সমালোচনাও হয়েছিল বেশ।
এবার মণিপুরে শঙ্কর দিনকর কেনের কাজের স্মরণে আয়োজিত হয়েছিল পুনেতে এই অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘ অনেক মানুষ মনে করেন যে শান্ত না থেকে আমাদের বজ্রবিদ্যুতের মতো করে চমকানো উচিত, কিন্তু বজ্রপাতের পর সেই অন্ধকারই ফিরে আসে। ফলে কর্মকর্তাদের উচিত প্রদীপের মতো জ্বলতে থাকা আর উজ্জ্বল হওয়া দরকার যখন প্রয়োজন।’
মোহন ভাগবতের কটাক্ষের লক্ষ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কি না, সে আলাপও শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে মোদিকে তিনি কোনো বার্তা দিতে চাইলেন কি না।
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বিজেপি-আরএসএসের দূরত্ব আলোচনার মধ্যে উঠে এসেছিল। ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের সাহায্যে সংঘকর্মীদের সেভাবে এগিয়ে না আসা নিয়েও আলোচনা হচ্ছিল। সেই রাজনৈতিক জল্পনা জোরালো হয়েছিল ভোট চলাকালে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার মন্তব্যে। নাড্ডা বলেছিলেন, বিজেপি এখন সক্ষম। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। ভোটে জিততে বিজেপির এখন আর তাই সংঘের হাত ধরার প্রয়োজন নেই।
ভোটের ফলে বোঝা গিয়েছিল, সংঘের সাহায্য সেভাবে না পাওয়ায় বিজেপির কতটা লোকসান হয়েছিল। প্রায় তিন মাস পর সংঘ এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে, বিজেপির সঙ্গে কিছু খটাখটি তাদের ছিল।
আরএসএসের প্রচার বিভাগের প্রধান সুনীল আম্বেকর গত সোমবার কেরালায় এক অনুষ্ঠানে সেই মতপার্থক্যের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এমন হয়েই থাকে। যেহেতু দুজনের লক্ষ্য ও বিশ্বাস এক, তাই তাদের একই আঙিনায় থাকা উচিত। মতপার্থক্য হলে আলোচনার মধ্য দিয়েই তা মেটানো হবে।
আম্বেকরের ওই মন্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই সংঘচালকের এই মন্তব্য বিজেপির প্রতি আরও এক সতর্কবাণী বলে মনে করা হচ্ছে। কোনো কোনো মহলের ধারণা, লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল না হলেও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের আচরণে তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। সেই কারণেই মোহন ভাগবতের এই সতর্কবার্তা।
লোকসভা ভোটের পর সংঘচালক বলেছিলেন, জনগণের প্রকৃত সেবক কখনো অহংকারী হন না। অন্যদের ক্ষতি করেন না। ঔদ্ধত্য দেখান না। জনজীবনে সব সময় শালীনতা বজায় রাখেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো শালীনতা বজায় রাখেনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল