গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ওই বৈঠক লাইভ সম্প্রচার করতে হবে, যদিও তাতে সাড়া দেয়নি মমতার প্রশাসন। ফলে ভেস্তে যায় বৈঠক। রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নের সভা ঘরে প্রায় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও যখন তৃতীয়বারের মত এই বৈঠক ভেস্তে যায়, তখন সংবাদ সম্মেলন করে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, 'মানুষের স্বার্থে আমি নিজে পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর পদ চাই না। কিন্তু আমি চাই মানুষ বিচার পাক। তিলোত্তমা বিচার পাক। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাক।'
দুই দিন পর আজ শনিবার দুপুরে কলকাতার সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন 'আমার পোস্টটা বড় কথা নয়। মানুষের পোস্টটাই বড় কথা।' মমতা এও বলেন 'আজ আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, বড় দিদি হিসেবে এখানে এসেছি।'
এদিন আচমকাই আন্দোলনকারীদের ধরনা মঞ্চে এসে মমতা বলেন, ‘আমি আজ এখানে ছুটে এসেছি তার কারণ আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই আমি নিজে ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। আমি নিজেও অনেক সাফার করেছি। আমি জানি আমার পোস্টটা বড় কথা নয়। মানুষের পোস্টটাই বড় কথা।'
আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মমতা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে আপনার অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আর কষ্ট না করে কাজে ফিরে যান। যদি আমার উপরে আস্থা-ভরসা থাকে, তবে আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সহানুভূতির সাথে আপনাদের দাবিগুলো ভেবে দেখব, চিন্তা করবো। আমি একা সরকার চালাই না। আমি আমার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলব।’ তার বার্তা 'যদি কেউ দোষী হয়, তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। তবে বিনা কারণে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না।'
তার অভিমত 'দোষিরা কেউ আমার শত্রু নয়, বন্ধুও নয়। আমি তাদের চিনি না জানি না আমাদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তারা শাস্তি পাবে।'
আন্দোলনরত জুনিয়ার চিকিৎসকদের ভাইবোন হিসেবে সম্বোধন করে মমতা ব্যানার্জি বলেন 'আপনাদের বড় দিদি হিসেবে আমি আজ অনুরোধ করতে এসেছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অনুরোধ করতে আসিনি। হ্যাঁ, আমি মুখ্যমন্ত্রী আছি। আমি একটা দলেরও প্রতিনিধিত্ব করি। আমি আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী। আপনাদেরকে অনুরোধ করব আমার কথা শুনুন।'
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে আসা মানে ছোট হওয়া নয়। এটা আমার শেষ চেষ্টা, আপনাদের জন্য করে গেলাম। আমার উপর ছেড়ে দিন আপনারা জাস্টিস পাবেন, ইনজাস্টিস পাবেন না।'
একসময় মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' বলে স্লোগান তুলতে থাকেন। এসময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন 'আমি নিহত নির্যাতিতার বিচার চাই। আমি চাই দোষীদের যেন তিন মাসের মধ্যে ফাঁসি হয়।’
এদিন ওই ধরনা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন কলকাতার আরজি কর হাসপাতালসহ রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির ভেঙে দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর জুনিয়র ডাক্তাররা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তারা আলোচনায় বসতে চান কিন্তু তাদের পাঁচ দফা দাবির সাথে কোন রকম সমঝোতা করবেন না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল