ইংল্যান্ডে ১০ বছর বয়সী এক কন্যা শিশুকে হত্যার দায়ে ৪২ বছর বয়সী পিতা উরফান শরীফ এবং ৩০ বছর বয়সী সৎ মা বেইনাশ বাতুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত।
বার্তা সংস্থা সিএনএন এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে নিজ বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় ১০ বছর বয়সী শিশু সারা শরীফের। আইনজীবীরা এই হত্যাকাণ্ডকে ধারাবাহিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অবহিত করেছেন ।
এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়ের চাচা ২৯ বছর বয়সী ফয়সাল মালিককে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তিনজনই পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে, পরবর্তীতে বাবা উরফান শরীফ যুক্তরাজ্যের পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছেন, "আইনত সে তাঁর মেয়েকে শাস্তি দিয়েছে এবং সে মারা গেছে"। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পিছনে তাঁর ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান তিনি।
ফোন পাওয়ার পরপরই লন্ডনের পুলিশ বাড়িতে যায় এবং ২০২৩ সালের ১০ই আগস্ট বিছানার কম্বলের নিচে সারার মৃতদেহ খুঁজে পায়।
যদিও পালিয়ে যাওয়ার এক মাস পরেই তিনজনই ব্রিটেনে ফিরে আসে এবং তাদের হত্যার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিএনএন এর দেয়া তথ্যমতে, সেন্ট্রাল ক্রিমিনাল কোর্টের বিচারে নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ উঠে আসে, যেখানে ৭০টিরও বেশি নতুন আঘাত এবং আরও অনেক পুরনো আঘাতের চিহ্ন ছিল, যার মধ্যে কালশিটে, পোড়া, হাড় ভাঙা এবং কামড়ের দাগ ছিল। এই ঘটনায় সামাজিক নিরাপত্তা এবং নির্যাতনে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সুরক্ষায় ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্নও উঠেছে।
বিচারক জন ক্যাভানাঘ বলেন, "সারার মৃত্যু ছিল বছরের পর বছর ধরে অবহেলা, ঘন ঘন হামলা এবং নির্মম নির্যাতনের ফসল।
বিচার শেষ হওয়ার পর ইংল্যান্ডের শিশু কমিশনার র্যাচেল ডি সুজা এক বিবৃতিতে বলেন, "তার মৃত্যু আমাদের শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থার গভীর দুর্বলতার এক মর্মান্তিক দিক তুলে নিয়ে এসেছে, যা একটি দেশ হিসেবে আমরা বারবার সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এর আগেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি - এবং প্রতিবারই আমরা বলেছি 'আর কখনো হবে না '।"
সারের কাউন্টি কাউন্সিল, যারা বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে সারা সম্ভবত তার বাবা-মায়ের দ্বারা শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে নির্যাতিত হবে, তারা তার মৃত্যুর পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরিকল্পনা করেছে। তার স্কুল সারার শরীরে কালশিটে দাগের কথা জানানোর পর শিশু পরিষেবা তদন্ত করেছিল কিন্তু সংস্থাটি আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিচারক ক্যাভানাঘ বলেন, তার বাবা-মা তাকে হিজাব পরতে বাধ্য করত - ধর্মীয় কারণে নয় বরং "সারার সারা শরীরে থাকা কালশিটে দাগ ঢাকার জন্য"।
সূত্র: সি এন এন
বিডি প্রতিদিন/আশিক