শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্রেক্সিট ইস্যুতে আশার আলো দেখছেন না তেরেসা মে

ব্রেক্সিট ইস্যুতে আশার আলো দেখছেন না তেরেসা মে

বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের সংসদে আবার পরাজয়ের মুখ দেখলেন প্রধানমন্ত্রী মে। ফলে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেল। ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তিতে নতুন করে কোনো ছাড় দেবে না বলে ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তার পরিকল্পনা সমর্থন করার প্রস্তাবের বিপক্ষে পড়ে ৩০৩ এবং পক্ষে পড়ে ২৫৮ ভোট। ফলে, ব্রেক্সিট চুক্তিটি পরিবর্তন করতে পারলে মে সেটি অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবেন বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হলো।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে যতই ব্রেক্সিটের জট ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন, ব্রিটেনের সংসদ তার পথে ততই বাধার সৃষ্টি করছে। ইইউয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের মাত্র ৪৩ দিন আগে সংসদে আবার তাকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হলো। শেষ মুহূর্তে ইইউর কাছ থেকে ছাড় আদায় করতে প্রধানমন্ত্রী যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেই উদ্যোগের প্রতি প্রতীকী সমর্থন হিসেবে সংসদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল সরকার। বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ক্ষমতাসীন টোরি দলের বেশ কয়েকজন সদস্য ভোটদানে বিরত থাকায় প্রধানমন্ত্রীকে এই পরাজয় মেনে নিতে হলো। তেরেসা মে নিজে ভোটাভুটির সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেন, সংসদে পরাজয় সত্ত্বেও সরকার ২৯ মে-র আগেই ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদলের মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সরকারের এই পরাজয়ের পর বিরোধী লেবার দলের নেতা জেরেমি কর্বিন বলেন, এই পরাজয়ের ফলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপের প্রতি সংসদে কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। লেবার নেতার মতে, প্রধানমন্ত্রী অযথা সময় নষ্ট করে চলেছেন এবং আশা করছেন, কিছু একটা ঘটবে, যার ফলে তার মুখরক্ষা হবে।

সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এই পরাজয়ের ফলে ইইউর সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে তার অবস্থান যে আরও দুর্বল হয়ে পড়ল, এ বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার পক্ষের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী নেতা লিয়াম ফক্স এ দুর্বলতার কথা স্বীকার করেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাবি করেন, সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি ব্রেক্সিট চুক্তিতে রদবদল করে ঠিক সময়ে বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল অবস্থানের প্রেক্ষাপটে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কা আরও বেড়ে যাচ্ছে। ইইউ শেষ পর্যন্ত তাকে কোনো ছাড় দিলেও ব্রিটেনের সংসদ আদৌ সেই বোঝাপড়া মেনে নেবে কিনা, সে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। ফলে তার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে আদৌ কোনো ফল পাওয়ার আশা কমছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরও হাল ছেড়ে দিতে চলেছে বলে কিছু মহলে শোনা যাচ্ছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৭ ফেব্র“য়ারি আবার সংসদের দ্বারস্থ হবেন। ব্রেক্সিট চুক্তিতে আয়ারল্যান্ডের সীমান্তে ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার বিকল্প আনা সম্ভব হলে তা নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। অন্যথায় সংসদ সদস্যরা চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কায় গোটা প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটের সময়সীমা পেছানো থেকে শুরু করে নতুন গণভোট বা আগাম নির্বাচনের মতো বিকল্প গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনের সংসদের পক্ষেও ইইউর সমর্থন আদায় করা সহজ হবে না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট ঘটলে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে আরও অনেক মহল সোচ্চার হয়ে উঠছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির পথেও অনেক বাধাবিপত্তি উঠে আসছে। ডয়েচে ভেলে

সর্বশেষ খবর