শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারতে তৈরি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ জলে ভাসল

ভারতে তৈরি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ জলে ভাসল

আইএনএস বিক্রান্ত। যার ওজন ৪৫ হাজার টন। যাতে ওঠানামা করতে পারবে ৩০টি বিমান। অবশ্যই এটি যুদ্ধজাহাজ। এর উচ্চতা ২৬২ মিটার এবং ৬২ মিটার চওড়া এ জাহাজে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ক্রু সদস্য থাকতে পারবেন। এ বিক্রান্ত ভারতের তৈরি সব থেকে বড় যুদ্ধজাহাজ। বিক্রান্ত তৈরিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার কোটি রুপি। আইএনএস বিক্রান্তের নামকরণ হয়েছে তারই আগের একটি রণতরীর নামে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বড় ভূমিকা পালন করেছিল ওই রণতরী। এবার পুরনো রণতরীর নামেই নামকরণ হয়েছে নতুনের। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাহাজটি কমিশন ঘোষণা করেন। গতকালই এটি সাগরে ভেসেছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে কাজ হয়েছে এ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ নিয়ে। গত বছরের আগস্টে শুরু হয়েছিল এর ‘সি ট্রায়াল’, প্রায় এক বছর ধরে আইএনএস বিক্রান্তের একাধিক সামুদ্রিক পরীক্ষার পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। বিক্রান্ত ছাড়াও ভারতের রয়েছে অন্য রণতরী ‘বিক্রমাদিত্য’। সেটি রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছিল। তবে এবার অন্য দেশ থেকে না কিনে ভারত নিজের দেশেই বানিয়ে ফেলেছে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ।

মূলত আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে ওঠা নৌবাহিনীর মোকাবিলায় নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপ্রাণ চেষ্টার ফসল এ বিক্রান্ত। রণতরীটির নাম নেওয়া হয়েছে সংস্কৃত ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘শক্তিশালী’ কিংবা ‘সাহসী’। ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বিমানবাহী রণতরীর উদ্বোধন করেন। বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশ যারা নিজ দেশে বিমানবাহী রণতরী তৈরিতে সক্ষম, তাদের তালিকায় যুক্ত হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন মোদি। তিনি বলেন, এ দিন একটি ঐতিহাসিক দিন, এক ঐতিহাসিক অর্জন। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতকে আত্মনির্ভর করতে সরকারের প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ এটি। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৪৭ হাজার টন ওজনের রণতরীটি পুরোপুরি সার্ভিসে আনা হবে। বিক্রান্ত হাতে পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্সের মতো দেশের তালিকায় ঢুকে পড়ল ভারত।

রণতরীর ভিতর : ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ বর্তমানে কেরালার সরকারি মালিকানাধীন কোচিন শিপইয়ার্ডে রয়েছে। সেখানেই রণতরীটি তৈরি হয়। সেখানেই গতকাল এর কমিশনিং অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধনের প্রাক্কালে এক কর্মকর্তা সাংবাদিক-দর্শনার্থীদের রণতরীটির ‘থ্রটল কন্ট্রোল রুম’ দেখান। এটি রণতরীর ‘হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিনগুলো পরিচালিত হবে। এখান থেকেই ‘ভাসমান শহরটি’ পরিচালিত হবে। জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাই কৃষ্ণান বলেন, রণতরীটিতে থাকা চারটি ইঞ্জিন একসঙ্গে ৮৮ মেগাওয়াট শক্তি তৈরি করে। এ পরিমাণ শক্তি একটি শহরের জন্য যথেষ্ট। রণতরীটিতে একটি ১৬ শয্যার হাসপাতাল আছে। আছে দুটি অস্ত্রোপচার কক্ষ। এ ছাড়া আছে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট। রণতরীটির হ্যাঙ্গারে রাশিয়ায় তৈরি দুটি যুদ্ধবিমান দেখা যায়। যার মধ্যে একটি মিগ-২৯কে ফাইটার। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিজয় শিওরান বলেন, এটা একটি পার্কিংয়ের জায়গার মতো। এখানে একটি দল উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করবে। এখান থেকেই বিশেষ লিফট উড়োজাহাজকে ফ্লাইং ডেকে নিয়ে যাবে। ফ্লাইট ডেক অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিদ্ধার্থ সোনি বলেন, তাঁদের ফ্লাইট ডেকের আকার প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। তাঁরা একবারে ১২টি যুদ্ধবিমান ও ৬টি হেলিকপ্টার চালাতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর