শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শিশুদের স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্যও হারাচ্ছেন বাবা-মা

শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট

স্বাধীনতার পর সব থেকে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ছয় মাস আগেও কঠিন সময় দেখেছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাপক অস্থিরতার পর দ্বীপ দেশটি এখন শান্ত হলেও বেকারত্ব আর উচ্চ দ্রব্যমূল্যের প্রভাব দৃশ্যমান হচ্ছে পরিবারগুলোতে। একটি ঘটনা দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। ১০ বছরের মালকি এতই উচ্ছ্বসিত যে, ভোরে কোনোভাবেই আর বিছানায় থাকতে চাইছিল না। অন্য চার ভাইবোনের চেয়ে এক ঘণ্টা আগেই সে ঘুম থেকে উঠেছে, যাতে নখের লাল পলিশ তুলে ফেলতে পারে। তার এই উচ্ছ্বাসের কারণ, আবারও সে স্কুলে ফিরছে, সে জন্যই পরিপাটি হতে চায়। মালকি ফের স্কুলে ফেরার সুযোগ পেলেও অন্য ভাইবোনদের বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে। তার পরিবার এখন সবার পড়ালেখার খরচ চালাতে অক্ষম, এ জন্য কেবল সে-ই স্কুলে যাচ্ছে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছয় মাস আগে চরম অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হয় সরকারও। এখন অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে দেশটি। কিন্তু গণবেকারত্ব ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পরিবারগুলো দিশাহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কায় মুদ্রাস্ফীতি সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায় ৯৫ শতাংশে পৌঁছালে খাদ্যদ্রব্যের দামও রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে। শ্রীলঙ্কায় স্কুলশিক্ষা বিনামূল্যে হলেও শিশুদের খাবার দেওয়া হয় না। খাবার, স্কুলের ইউনিফর্ম ও পরিবহন খরচ হিসাব করলে এ মুহূর্তে দেশটিতে স্কুলের পড়াশোনা একটি বিলাসী ব্যাপার, যা প্রিয়ন্তিকার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা : সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাদা সুতির ইউনিফর্ম পরে নোংরা রাস্তা ধরে, মোটরসাইকেল বা টুকটুকে চড়ে স্কুলের পথে ছুটতে হয় শিশুদের। কিন্তু স্কুলগুলোর অবস্থা কেমন? সেই প্রসঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন কলম্বোর কোটাহেনা সেন্ট্রাল সেকেন্ডারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রক্রমা বীরসিংহ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার চিত্র যে প্রতিদিনই চোখে পড়ছে তার। ‘যখন স্কুলের সময় শুরু হয়, সকালের সমাবেশ করি, তখন ক্ষুধায় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয় শিশুদের,’ বলেন তিনি।

সরকার বলেছে, তারা স্কুলে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। তবে কিছু কিছু স্কুলে যোগাযোগের পর তারা বিবিসিকে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য না পাওয়ার কথা জানান।

এদিকে ইউনিসেফ বলছে, আসছে মাসগুলোতে মানুষের পক্ষে খাবার জোগাড় করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা পরিবারগুলোকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। ফলে সারা দেশে আরও অনেক শিশু ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে বলেই মনে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর