শিরোনাম
শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনসংখ্যা কমার প্রভাব পড়ছে চীনে

বিশ্বজুড়ে বয়স্ক জনসংখ্যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে

২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা সাড়ে ৮ লাখ কমেছে। দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরোর অনুমান, জন্মহার কমার এ প্রবণতা চলমান থাকবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘বাচ্চা নেওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়া, বিয়ে ও গর্ভাবস্থায় দেরি এবং গর্ভধারণের উপযুক্ত বয়সের নারীর সংখ্যা কমে যাওয়া।’ তবে জনসংখ্যা কমার এই প্রবণতাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ২০৩০ সালের পর জনসংখ্যা কমার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। জন্মহার দেশটিতে অনেক বছর ধরেই কমছে, সেটা রোধে সরকার অনেক পদক্ষেপও নেয়। যার মধ্যে সাত বছর আগে আলোচিত এক সন্তান নীতিও তুলে দেওয়া হয়। তবে এই সঙ্কটের কোনো সহজ সমাধানের পথ খোলা নেই। বিশেষ করে চাইনিজ জনসংখ্যার যে ক্রমবর্ধমান বয়স সেটা ভাবনায় ফেলছে অর্থনীতিবিদ ও জনসংখ্যাবিদদের।

বিশ্বজুড়ে বয়স্ক জনসংখ্যা অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু চীনকে উদ্বিগ্ন করছে যে গতিতে এটা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের মাঝামাঝি এই বয়সটা চলে আসছে। সহজ কথায় চীন বড় লোক হওয়ার আগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো এ সপ্তাহে জানায় যে, ৬০ বছরে প্রথমবার দেশটিতে জনসংখ্যা কমার পাশাপাশি জন্মহারও পৌঁছেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। কিছু গবেষক মনে করেন, জনসংখ্যা কমা শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকেই এবং শুমারির হিসাবে ভুল আছে। তবে যেটাই হোক চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ২০১২ সাল থেকে হুমকির মুখে। জাতিসংঘের হিসাবে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের জনসংখ্যা এই শতকের মধ্যে চীনের অন্তত আরও ৬০% কমে যাবে।

ফ্যাথম ফিন্যান্সিয়াল কনসাল্টিংয়ের সহকারী প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ডরু হ্যারিস বলেন, চীনের নির্মাণ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফ্যাথমের হিসাবে নির্মাণ সেক্টরে এক তৃতীয়াংশই শ্রমিক তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু উৎপাদন করার কথা সেটা তারা করছেন না।

সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধান পরিসংখ্যানবিদ পল চ্যাং অবশ্য মনে করেন, জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য চীনের কাছে অনেক জনশক্তি এবং সময় আছে। ‘তারা এখনি খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি,’ চ্যাং বলেন। জাপান ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে চ্যাং বলেন, এ দুটি দেশ তাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভারসাম্যও বজায় রেখেছে। তবে সবাই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না।

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে গেলে চীনে শ্রমের দাম বেড়ে যেতে পারে, তার ফলে বাড়তে পারে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যও। দেশটির পেনশন তহবিলের ওপরও চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জনসংখ্যা পতনের ‘রিপল’ প্রভাব পড়তে পারে চীনের বাইরেও। তারা বলছেন, চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানে মজুরি বেড়ে যাবে। ফলে পণ্য তৈরির খরচও বেড়ে যাবে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশ্বের ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত চীন থেকে অনেক অর্ডার এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। ‘চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া ও উৎপাদন কমে গেলে ইউরোপ ও আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে,’ বলছিলেন ই ফুজিয়ান। যিনি উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও চীনের বাতিল হওয়া এক সন্তান নীতির সমালোচক।

সর্বশেষ খবর