মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্ত্র কিনতে ২ কোটি ৩৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়

অস্ত্র কিনতে ২ কোটি ৩৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়

অর্থের পরিমাণ ২.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। গত বছর এই পরিমাণ টাকা অস্ত্র কেনার জন্য ব্যয় করেছে বিশ্বের দেশগুলো। যা বিশ্বের জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। বিশ্বে সামরিক খাতে যে ব্যয় সর্বকালের সর্বোচ্চ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ইউরোপের দেশগুলো তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য ১৩ শতাংশ বেশি খরচ করেছে। আর ওই বছরটির (২০২২) প্রায় পুরোটা জুড়েই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলেছে। সিপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর শুধু ইউক্রেনেই সামরিক খরচের পরিমাণ সাত গুণ বেড়ে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ। এর পাশাপাশি দেশটি অন্যান্য দেশ থেকে শতকোটি ডলার মূল্যের অস্ত্রসহায়তা পেয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, টানা আট বছর ধরে এই খরচ বেড়েই চলেছে।

তবে রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় সামরিক খরচ বৃদ্ধি করেছে অন্য দেশগুলোও। এসআইপিআরআই’র মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার অ্যান্ড আর্মস প্রোডাকশন প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক নান তিয়ান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক সামরিক খাতে অব্যাহতভাবে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আমরা ক্রমশ অনিরাপদ একটি বিশ্বে বসবাস করছি। অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিবেশে বিভিন্ন দেশ তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। নিকট ভবিষ্যতে এর উন্নতি ঘটবে না।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এর ফলে রাশিয়ার প্রতিবেশী অথবা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল এমন দেশগুলোতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ফিনল্যান্ড তার সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে দেয় শতকরা ৩৬ ভাগ। লিথুয়ানিয়া বাড়ায় শতকরা ২৭ ভাগ। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের আছে প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত। এ দেশটি এপ্রিলেই ন্যাটোর ৩১তম সদস্য হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক জোট কমপক্ষে ২০০ বছর এড়িয়ে আসছে সুইডেন। তারাও এখন ন্যাটো জোটে যুক্ত হতে চাইছে। সিপ্রির এ গবেষণা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক নান তিয়ান আরও বলেন, যুদ্ধরত ইউক্রেন ও রাশিয়াকে বাদ দিয়ে হিসাব করলেও দেখা যাচ্ছে ইউরোপের খরচ অনেক বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ইউরোপে সামরিক খাতে ৪৮ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছে। গত দশকের তুলনায় মহাদেশটিতে খরচের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। আগামী দশকেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে কিংবা বাড়তে পারে। গত বছরে বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন। দেশটির খরচ বিশ্বের মোট সামরিক খরচের ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি এ দুটি দেশে হয়। এ ছাড়া গত বছর সামরিক খাতে বিশ্বের মোট খরচের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ রাশিয়ায়, ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভারতে এবং ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সৌদি আরবে হয়েছে। জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়াতেও সামরিক খাতে খরচ বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে যুক্তরাজ্য। বিশ্বে সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করার তালিকায় যুক্তরাজ্যের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। গত বছর গোটা বিশ্বে সামরিক খাতে যত খরচ হয়েছে, তার ৩ দশমিক ১ শতাংশ যুক্তরাজ্যের। এর পরেই আছে জার্মানি। বিশ্বে সামরিক খাতে মোট ব্যয়ের আড়াই শতাংশ জার্মানির আর ২ দশমিক ৪ শতাংশ ফ্রান্সের। ইউক্রেনের জন্য দেশগুলোর দেওয়া সহায়তাও এ খরচের আওতাভুক্ত।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর