শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষের বিলুপ্তির কারণ হবে এআই?

মানুষের বিলুপ্তির কারণ হবে এআই?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকি হবে কি না, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এখানে বিভক্ত মত দিচ্ছেন। গত বছর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের মধ্যে এক জরিপ চালানো হয়। তাতে ৪৮ শতাংশ গবেষক মত দেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার খুব খারাপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে ১০ শতাংশ। তবে ২৫ শতাংশ গবেষক মনে করেন, মানব অস্তিত্বের জন্য এআই ঝুঁকি হতে পারে এমন হার শূন্য। কিন্তু ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক ইউভাল নোয়াহ হারারি এ সম্পর্কে বলছেন, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি, যা আমাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি বইও লিখেছেন। মানবজাতির ইতিহাস নিয়ে ইউভাল নোয়াহ হারারির লেখা বই ‘সেপিয়েন্স’ পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) উত্থান নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার চিন্তা ও দর্শন। দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এআই প্রসঙ্গে ৪৭ বছর বয়সী হারারি বলেন, ‘ইতিহাসে এটাই প্রথম প্রযুক্তি, যা গল্প তৈরি করতে পারে।’ তার দৃষ্টিতে, ‘গল্পের ওপর আমাদের সামষ্টিক বিশ্বাস ধর্মে, অর্থনীতিতে ও অন্য জাতির প্রতি পৃথিবীতে মানবজাতির আধিপত্য জোরদার করেছে।’

এখন এআইও এমন গল্প বুনতে পারে। এআই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রযুক্তির ভালো ও ক্ষতিকর উভয় দিকই আছে। একসময় যাকে বহুদূরের ও তাত্ত্বিক জিনিস মনে হতো, আজ তা বাস্তব, হাতছোঁয়া দূরত্বের। এ কারণে গত মাসে চ্যাটজিপিটির মতো সফটওয়্যার নিয়ে গবেষণা স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে কয়েক হাজার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি যে চিঠি দেন, তাতে শামিল হয়েছিলেন হারারিও। উল্লেখ্য, চ্যাটজিপিটি সৃজনশীল লেখা তৈরিতে সক্ষম। অন্যান্য এআই প্রযুক্তি ছবি ও শব্দেও এমন সৃজনশীল ক্ষমতা দেখাতে পারে। হারারি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের এআই শুধু মানুষের তৈরি কনটেন্টই ছড়াচ্ছে না, নিজেও কনটেন্ট তৈরি করছে। কল্পনা করুন তো এমন এক পৃথিবীর কথা, যেখানে সিংহভাগ লেখা, গান, টিভি সিরিজ, ছবির স্রষ্টা হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কেমন লাগবে সেই পৃথিবীতে থাকতে? এ ব্যাপারটির অর্থ আমরা বুঝতে পারছি না। সংস্কৃতি যদি এআইয়ের দখলে চলে যায়, এর পরিণতি কী হবে?’ এমন ছোটখাটো নজির ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। গত সপ্তাহেই এক জার্মান ম্যাগাজিন এআইয়ের সাহায্য নিয়ে মাইকেল শুমাখারের একটি ভুয়া সাক্ষাৎকার ছাপে। হারারি বলেন, এআই অচিরেই এর চেয়েও বড় কেরামতি দেখাবে।

যেমন অনলাইনে আপনি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কারও সঙ্গে তর্ক করলেন। দুজন মানুষ কথা বলছে এমন একটি ভিডিও পাঠানো হলো আপনাকে। কিন্তু দেখা গেল ভিডিওতে যারা কথা বলছে সে কোনো রক্ত-মাংসের মানুষ নয়, তাদের বানিয়েছে এআই। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে এআই স্রেফ মানুষের ছবি বা ভিডিও তৈরিতেই আটকে নেই। সে আমাদের প্রিয় বন্ধু বা আত্মীয়ের ভিডিও বানাচ্ছে। কারণ ঘনিষ্ঠ মানুষ আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দেখা যাবে, তাদের মতো চেহারার মানুষের ভিডিও বানিয়ে এআই জলবায়ু পরিবর্তন, টিকা বা অভিবাসীদের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করছে। হারারি বলেন, ‘এটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য বেশি বিপজ্জনক। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো প্রকাশ্য বক্তব্যের ওপর নির্ভরশীল। গণতন্ত্র মূলত আলোচনা। মানুষের পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা। এ আলোচনার দখলই যদি এআইয়ের হাতে চলে যায়, গণতন্ত্রের জীবনাবসান হবে।’

এ অবস্থায় এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন নিয়মনীতি প্রণয়নের জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হারারি। প্রযুক্তি শিল্প নিজে থেকে এমন নিয়মনীতি প্রণয়ন করবে, এমন আশা করাটা বোকামি। শুধু হারানি নন, অনেক গবেষকেই তার সঙ্গে এক মত। অন্যান্য গবেষক মনে করেন, ঝুঁকির হার ৫ শতাংশ। তবে আশঙ্কার বিষয়টি হচ্ছে, উন্নত এআই সিস্টেমে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। যেমন বিষাক্ত কোনো কিছু বা ভাইরাস ছড়ানো বা মানুষকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্ররোচিত করার মতো পথ বেছে নিতে পারে। গবেষকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতের এআইয়ের নিজের উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এসব উদ্দেশ্য এর নির্মাতাদের চেয়ে পৃথক কিছু হয়ে উঠতে পারে। এসব আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ধরনের উদ্দেশ্য সাধন করতে হলে বর্তমান প্রযুক্তি থেকে অনেক উন্নত হতে হবে এআইকে। এ থেকেই এআই নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর