শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
মার্কিন বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

এল নিনো শুরু, আবহাওয়া হবে চরম

স্প্যানিশ শব্দ ‘এল নিনো’র অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। আর এর বিপরীত অবস্থার নাম ‘লা নিনা’, যার অর্থ ‘লিটল গার্ল’ বা ‘ছোট মেয়ে’। পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলীয় প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে, তখন তাকে লা নিনা বলা হয়। এল নিনো বন্যা, খরা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উন্নয়নশীল যেসব দেশ কৃষিকাজ এবং মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল, তারাই এল নিনো দ্বারা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

আবারও শুরু হয়েছে আবহাওয়ার বিচিত্র দশা-এল নিনো। মূলত অজ্ঞাত কারণে সমুদ্রের পানি গরম হয়ে যাওয়া ও উপকূলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই এর প্রভাব। যে বছর এল নিনো দেখা দেয়, তার পরের বছরে বেড়ে যায় বিশ্বের উষ্ণতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালে হতে পারে বিশ্বের উষ্ণতম বছর। যাতে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দেবে খরা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাড়বে বৃষ্টি; কমবে, বাংলাদেশ ও ভারতে। মার্কিন ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী এল নিনো জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। এতে আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চরম রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এ সতর্কবার্তা দেন তারা।

সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, নীলাভ স্রোতরাশি শীতল নয়, বরং সাগরের এ পানি ফুটছে টগবগ করে। প্রকৃতির এই বিচিত্র দশার নাম ‘এল নিনো’। ১৬ শতকে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের এক দল জেলে প্রথম খেয়াল করেন এ উষ্ণ সমুদ্রজল। এরপর থেকে দুঃসংবাদের মতো পৃথিবীতে প্রায়ই ফিরে আসে এল নিনো দশা।

মার্কিন বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন- এ বছরেই শুরু হয়ে গেছে এল নিনো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চরমভাবাপন্ন এই আবহাওয়ার জন্য ২০২৪ সাল থেকে হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ বছর। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জলবায়ু পূর্বাভাস বিভাগের প্রধান উইলফ্রান মউফউমা ওকিয়া বলেন, ‘এল নিনো পর্বে প্রবেশের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। আগস্টে এ সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়াবে ৮০ শতাংশে। এর প্রভাব পরবে পরের বছরে। অবশ্যই এটি বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু প্যাটার্ন বদলে দেবে।

চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া সতর্ক করে বলেছে, দাবানলের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো এল নিনোর প্রভাবে আরও বেশি উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে। জাপান বলছে, দেশটিতে বসন্ত ঋতু রেকর্ড মাত্রার উষ্ণ ছিল। আর এর জন্য এল নিনো আংশিকভাবে দায়ী।

বিশ্বে সবচেয়ে উষ্ণতম বছরগুলো রেকর্ড হয়েছে এল নিনো চলাকালে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, চলতি গ্রীষ্মে এবং পরবর্তীকালে স্থলভাগে ও সমুদ্রে রেকর্ড মাত্রার তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে। ত্রাণ সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের সদস্য মারিয়ানা পাওলি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে দরিদ্র জনগণ এমনিতেই খরা, বন্যা ও ঝড়ের ঝুঁকিতে আছে। এল নিনোর প্রভাবে এখন তাদের তীব্র মাত্রার তাপমাত্রার মুখোমুখি হতে হবে।

মূলত প্রশান্ত মহাসাগরে উৎপত্তি হলেও, এবারে এল নিনোর প্রভাব দেখা যাবে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা দেবে খরা, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে এবং ভারত তথা এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অনেক কমে যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা অন্তত দেড় থেকে দুই ডিগ্রি বাড়বে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের মহাসচিব পেটেরি তালাস এমনটি জানিয়েছেন। এল নিনো প্রতি দুই থেকে সাত বছর অন্তর ঘটে। সাধারণত যে বছর এল নিনো শুরু হয় তার পরের বছরটিতে তীব্র গরম অনুভূত হয়। এর আগে ২০১৫ সালে এল নিনো হয়েছিল বলে ২০১৬ সালে বিশ্বে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা দেখা গিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর