পরিবেশ পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানী-গবেষকরা প্রতিদিনেই ভয়ংকর সব তথ্য দিচ্ছেন। এতদিন বিশ্ব-উষ্ণায়নের নানা সংকটের মধ্যে বলা হচ্ছিল গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, বরফ গলছে, হিমবাহ গলছে, সমুদ্রে পানিস্তর বাড়ছে। কিন্তু গাছের শারীরবৃত্তীয় কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে- এতটা বোধহয় আশঙ্কা করা যায়নি! এবার সেটাই ঘটল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উদ্ভিদরাজ্যের সালোকসংশ্লেষ কমতে শুরু করেছে। কমছে ক্রান্তীয় অরণ্য।
অরণ্যাঞ্চল বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়, ফিরিয়ে দেয় অক্সিজেন। আসলে গাছ তখন কার্বন ডাইঅক্সাইড, জল ও সূর্যালোক মিলিয়ে নিজের জন্য খাবার তৈরি করে। জীববিজ্ঞানের পাতায় উদ্ভিদের এই শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার কথা সবাই পড়েন। একে বলা হয় ফোটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষ। এখন যদি সত্যিই তাই হয়। তাহলে কী হবে তার উত্তর সবারই জানা। সেই মৃত্যুর দিকেই ক্রমশ এগিয়ে চলেছে জীবকূল।
ক্রান্তীয় অরণ্যকে বলা হয় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। এরা বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকর কার্বন-ডাইঅক্সাইড গ্যাস শুষে নিয়ে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয় প্রকৃতিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দীর্ঘদিন ধরে অরণ্যাঞ্চল এই সালোকসংশ্লেষ যথাযথ করতে পারছে না। ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি, তাপমাত্রা এতই বাড়ছে যে, তা ক্রান্তীয় অরণ্যের পক্ষে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
তাপমাত্রা আরও বাড়লে এর পরে গাছেরা আর সালোকসংশ্লেষ করতেই পারবে না! আর সালোকসংশ্লেষ কমলেই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাসে যে অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয় গাছ, তা কমবে। ফলে বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়বে।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক গ্রেগরি আর গোল্ডস্মিথ বলেন, আমরা বহু আগে থেকেই জানি, গাছের পাতার তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছলে সালোকসংশ্লেষ করার পদ্ধতি ভেঙে পড়ে। কিন্তু এই গবেষণায় প্রথম প্রমাণিত হলো, ক্রান্তীয় অরণ্য বিপৎসীমার খুব কাছে চলে এসেছে।
বিজ্ঞান এতদিন বলেছে, তাপমাত্রা ১১৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে গাছ তার সালোকসংশ্লেষ পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেয়। নতুন গবেষণায় এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে, ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ক্রান্তীয় অরণ্যে তাপমাত্রা বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এবং এরকম চলতে থাকলে আরও বেশি করে গাছপালা তাদের সালোকসংশ্লেষের ক্ষমতা হারাবে।