যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর তিনি হতাশ হলেও সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি প্রায় কাউকেই বিশ্বাস করি না। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সম্ভাব্য চুক্তির আশাও তিনি করছেন। ফোনালাপে নেওয়া এই সাক্ষাৎকারের কয়েক ঘণ্টা আগেই ট্রাম্প ইউক্রেনে আরও অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেন এবং ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি না হলে রাশিয়ার ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে বিবিসিকে ফোনে দেওয়া ২০ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, পুতিনের সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় হতাশাও প্রকাশ করেন। তার কথায়, আমি বলি- চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি। আর ঠিক তখনই তিনি (পুতিন) কিয়েভে একটি ভবন গুঁড়িয়ে দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার সঙ্গে কয়েকবার চুক্তি হতে যাচ্ছে বলেও ভেবেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রত্যেকবারই শেষ মুহূর্তে পিছু হটেছে মস্কো। একসময় ন্যাটো জোটকে ‘অচল’ বললেও এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘ন্যাটো এখন তাদের নিজস্ব ব্যয় মেটাচ্ছে, ফলে এটি আগের চেয়ে কার্যকর।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছোট দেশগুলো যেন বড় শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারে, এটাই সম্মিলিত প্রতিরক্ষা।’ গত বছর পেনসিলভানিয়ার বাটলারে এক নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ঘটনার বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে তিনি বলেন, ‘এটা (হত্যাচেষ্টা) আমাকে বদলে দিয়েছে কি না, তা নিয়ে ভাবতে চাই না। কারণ সেটা করলে জীবনটাই বদলে যাবে।’ আগামী সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বার যুক্তরাজ্য সফরে যেতে আগ্রহী ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি ভালো সময় কাটাতে চাই এবং রাজা চার্লসকে সম্মান জানাতে চাই, কারণ তিনি একজন দারুণ ভদ্রলোক।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি একজন উদারপন্থি হলেও আমি তাকে পছন্দ করি।’ ব্রেক্সিট ইস্যুতে তিনি মনে করেন, যুক্তরাজ্য ‘সোজা পথে ফিরে আসছে’। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্যচুক্তিকে তিনি ‘বিশেষ সম্পর্কের’ অংশ বলে উল্লেখ করেন। নিজের প্রেসিডেন্সির মূল্যায়ন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আমেরিকাকে বাঁচিয়েছি। এক বছর আগে এটি ছিল মৃত, আর এখন এটি একটি মহান দেশ।’ বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘দুবার নির্বাচিত হওয়ার মাঝে বিশেষ দক্ষতা থাকে। জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনের নেতারা এখন আমাকে সম্মান করেন।’ বিশ্বনেতাদের তোষামোদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তারা শুধু ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।’
ইউক্রেন মস্কোতে আঘাত হানতে পারবে কি না জানতে চেয়েছেন ট্রাম্প : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলা জোরদার করতে উৎসাহিত করেছেন। এমনকি তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে জানতে চেয়েছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে ইউক্রেন মস্কোতে আঘাত হানতে পারবে কি না। গতকাল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে। এই কথোপকথনের সঙ্গে পরিচিত দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলার এক দিন পর ৪ জুলাই ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ট্রাম্প ইউক্রেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।-বিবিসি ও দ্য টেলিগ্রাফ