তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ছয় মাস পেছাতে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের আনা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ায় আজ থেকেই ইরানের ওপর জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘে ব্রিটেনের প্রতিনিধি বারবারা উড শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ ঘোষণার পরপরই তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের কারণে যে কোনো পরিণতির দায় পশ্চিমাদের নিতে হবে। নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের যে সিদ্ধান্ত হলো তা তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমা শক্তিগুলোর উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইরান আগেই জানিয়েছিল, এমন যে কোনো পদক্ষেপ কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মাত্র চারটি রাশিয়া-চীনের খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। নয়টি দেশ বিপক্ষে অবস্থান নেয়, দুটি দেশ বিরত থাকে। ফলে ছয় মাসের জন্য ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল স্থগিত রাখার প্রস্তাব পাস হয়নি। ভোট শেষে ব্রিটিশ প্রতিনিধি বারবারা উড বলেন, ‘এ পরিষদ ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়ার সব ধাপ পূরণ করেছে। তাই ইরানের ওপর পারমাণবিক বিস্তার রোধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এ সপ্তাহান্তেই পুনর্বহাল হবে।’ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলেও এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে সরে আসবে না। ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র চাইবে না। আমাদের অত্যধিক সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিয়ে স্বচ্ছ থাকতে আমরা প্রস্তুত,’ বলেছেন তিনি। তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে ২০১৫ সালে হওয়া এক চুক্তির শর্ত ইরান ভঙ্গ করেছে অভিযোগে তিন ইউরোপীয় শক্তি গত মাসে এ-সংক্রান্ত ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় করায় জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হচ্ছে। ইরানের সঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির শেষ মুহূর্তের আলোচনায়ও অচলাবস্থা না কাটায় কূটনীতিকরা নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস বিলম্বিত করতে রাশিয়া-চীনের উদ্যোগ সফল হবে না বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর গতকাল ইরান জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের। ‘স্ন্যাপব্যাক’ সক্রিয় করায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিয়েছিল ইরান। আর জাতিসংঘে রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত পশ্চিমাদের অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা কূটনীতির পথকে ‘কবর দিয়েছে’। নিরাপত্তা পরিষদকে ইরানের প্রতিনিধি আরাগচি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, আর ই৩ (ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি) সেটিকে কবর দিয়েছে। এই স্ন্যাপব্যাক আইনগতভাবে অকার্যকর, রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।’ -রয়টার্স
নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের ওপর আবারও অস্ত্র কেনাবেচায়, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা বহাল হবে। বিশ্বব্যাপী থাকা দেশটির সম্পদ জব্দ হবে, অনেকের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। জ্বালানি খাতেও এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্র ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসে তেহরানের ওপর কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।