গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রচেষ্টা রাশিয়া, চীন ও কয়েকটি আরব দেশের শক্ত বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এসব দেশ অভিযোগ তুলেছে, প্রস্তাবিত শাসন কাঠামো অস্পষ্ট এবং এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোনো অন্তর্বর্তী ভূমিকা দেওয়ার কথা উল্লেখ নেই। গতকাল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘের আলোচনার বিষয়ে অবগত চার কূটনীতিক জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত ‘বোর্ড অব পিস’ পুরোপুরি বাতিল করার দাবি তুলেছে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য রাশিয়া ও চীন। বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের সংশোধিত খসড়ায় বোর্ড অব পিসসংক্রান্ত ভাষা বজায় রাখা হলেও তাতে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের উল্লেখ যোগ করা হয়েছে। আগের খসড়ায় বিষয়টি না থাকায় সমালোচনা হয়েছিল।
এক মাসে নিহত ২৬০ ফিলিস্তিনি : গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক মাসে নিহত হয়েছেন ২৬০ জন ফিলিস্তিনি। আহত আরও ৬৩২ জন। শুধু গাজা নয়, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবারও গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়া, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদাররা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে গত এক মাসে নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি।
অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অব্যাহত আছে নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলা ও অভিযান। হেবরনের উত্তরাঞ্চলে বেইত উমর শহরে দখলদারদের গুলিতে কয়েকজন শিশু নিহত হয়। আনতাবা শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের লড়াই ও কয়েকজনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। জেরুজালেমে দখলদারদের অভিযানের সময় গুলিতে আহত হন অনেকে। এদিকে নেতানিয়াহু বাহিনীর আগ্রাসনের মধ্যেই গাজা থেকে আরও এক জিম্মির লাশ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যত দ্রুত সম্ভব জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে সংগঠনটি কাজ করছে বলেও জানানো হয়েছে। শীতের ঝড় আসার কারণে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে গাজার রাফাহ শহরের ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স। তাঁবু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর কাছে শীত ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, ১২ ঘণ্টা ধরে একটি বিমানেই আটকে থাকা ১৫৩ ফিলিস্তিনিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অবশেষে বিমান থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত পুলিশ জানায়, বিমানটি ওআর তাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পরে অবতরণ করে। দেশটির সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় একটি মানবিক সংস্থা যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের অবতরণের অনুমতি দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (বিএমএ) জানিয়েছে, যাত্রীদের বিমান থেকে নামতে দেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের পাসপোর্টে প্রচলিত প্রস্থানের ছাপ ছিল না। এ ছাড়া তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় কত দিন থাকবেন বা কোথায় অবস্থান করবেন, তা জানাতে পারেননি। বিএমএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ইমিগ্রেশন পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে এবং কেউ আশ্রয় চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ না করার কারণে প্রাথমিকভাবে তাদের দেশে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল। -আলজাজিরা ও মিডল ইস্ট আই