দুই শক্তিধর সামরিক গোষ্ঠীর ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে গৃহযুদ্ধের ফাঁদে পড়ে ধুঁকছে আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ সুদান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারি বাহিনী সুদানিজ আর্মড ফোর্সেস (এসএএফ) ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে চলমান সংঘাত পশ্চিম সুদানের দারফুর থেকে পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানী খার্তুম, দারফুর, কর্ডোফান, এমনকি পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষই একের পর এক শহর নিজেদের দখলে নিতে লড়াই করে যাচ্ছে। ফলে অগণিত বেসামরিক মানুষ নিহত ও বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিকসংকট। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সুদানের চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল সতর্ক করে বলেছেন, দেশটির সংকট দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক দ্বিতীয় সম্মেলনের ফাঁকে গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে এবং এখনই এ সহিংসতার দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটাতে হবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘সুদানে ভয়াবহ সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, সম্প্রতি পশ্চিম সুদানের আল-ফাশর শহর দখলের পর দারফুরের সংঘাত নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আল-ফাশর ছিল দারফুরে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি। এ শহর পতনের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধে বড় মোড় এসেছে। এখন আরএসএফ কার্যত দেশের মোট ভূখণ্ডের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, আল-ফাশর শহর পতনের সময় শত শত বেসামরিক মানুষ ও যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ সদস্যরা শহর দখলের পর পুরুষদের একত্রিত করে গুলি করে মেরে ফেলেছে। যদিও আরএসএফ দাবি করেছে, তারা কোনো বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেনি। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সভাপতি মিরজানা স্পোলজারিক জানিয়েছেন, পশ্চিম সুদানের আল-ফাশর থেকে পালিয়ে আসা মানুষের অবস্থা ভয়াবহ রকমের করুণ। কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করছেন। এ পরিস্থিতি একেবারেই মানবিক সীমার বাইরে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। স্পোলজারিক আরও বলেন, আল-ফাশর থেকে যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছেন, তাদের কাছে খাদ্য, পানি বা চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছানোর মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। শহরটি এখন কার্যত মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এ সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাজার হাজার পরিবার সব হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাচ্ছে। এরই মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। -আলজাজিরা