কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পানিসংকটে হিমশিম খাওয়া ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, যে খরা ইরানকে কাবু করে রেখেছে তা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই ১ কোটির বেশি বাসিন্দার শহর তেহরান বসবাস-অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বৃষ্টি না হলে সরকার তেহরানে পানি রেশনিং বা পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু করতে পারে। ‘রেশন করার পরও যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে একপর্যায়ে আমাদের কাছে কোনো পানি থাকবে না। তখন তাদের (নাগরিক) তেহরান ছেড়ে যেতে হবে,’ গতকাল পেজেশকিয়ান এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তেমন কিছু হলে তা ইরানের মোল্লাতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। ২০২১ সালে পানির ঘাটতির কারণে ইরানের দক্ষিণের খুজেস্তান প্রদেশ সহিংস বিক্ষোভ দেখেছে। ২০১৮ সালেও শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে পানি নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু বিক্ষোভ হয়েছে, কৃষক তখন এমন সংকটের জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছিল। বেশি বেশি বাঁধ নির্মাণ, অবৈধ কূপ খনন, অদক্ষ উপায়ে কৃষিকাজসহ দশকের পর দশকের অব্যবস্থাপনায় দেশটিতে পানির রিজার্ভ কমেছে বলে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কয়েক দিন ধরে একাধিক সমালোচক ও পানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন। পানিসংকট এখন এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছেছে যে গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়েই নিয়মিত প্যানেল আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলছে। পেজেশকিয়ানের সরকার ভয়াবহ এ সংকটের জন্য ‘আগের সরকারগুলোর নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত পানি ব্যবহারসহ’ নানান কারণ হাজির করছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ সংকট নিয়ে বিক্ষোভের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ইরানিরা এমনিতেই চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। এ সংকটের প্রধানতম কারণ দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা, যা দেওয়া হয়েছে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে। পশ্চিমাদের ভয়, ইরান ধীরে ধীরে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের পথে অগ্রসর হচ্ছে। তবে তেহরান এ আশঙ্কা অমূলক বলে আসছে। তাদের ভাষ্য, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একেবারেই শান্তিপূর্ণ এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে মোটেও আগ্রহী নয়। এ বাধাবাধির মধ্যে এখন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির বাসিন্দারা নতুন করে তীব্র পানির সংকটে পড়েছে। উঁচু উঁচু ভবনসংবলিত রাজধানী থেকে শুরু করে মাঝারি, ছোট সব শহর এ সংকটের তীব্রতা টের পাচ্ছে। দিনকয়েক আগে যখন তেহরানের পূর্বাঞ্চলে মেহনাজের অ্যাপার্টমেন্টের কলে পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল, তিনি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। -রয়টার্স
আগে থেকে কোনো সতর্কবার্তা না থাকায় বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেননি। ‘তখন রাত ১০টার মতো বাজে, সকাল ৬টার আগে পানি আসেনি,’ বলেছেন তিনি। কোনো পাম্প বা পানি সংরক্ষিত না থাকায় তাঁকে ও তাঁর দুই সন্তানকে বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। দাঁত মাজতে ও হাত ধুতে হয়েছে বোতলের পানি দিয়ে। ইরানের ন্যাশনাল ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্টওয়াটার কোম্পানি তেহরানে আনুষ্ঠানিকভাবে পানি রেশনিংয়ের খবর উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। তবে কোম্পানিটি বলেছে, তেহরানে রাতের বেলায় পানির চাপ হ্রাস করা হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও এটি শূন্যেও নামতে পারে। বেশি বেশি পানি ব্যবহার নিয়ে জুলাইয়ে সতর্কও করেছিলেন পেজেশকিয়ান। সে সময় পানি কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তেহরানের ৭০ শতাংশ বাসিন্দা প্রতিদিনের জন্য নির্ধারিত ১৩০ লিটারের বেশি পানি ব্যবহার করছে।