১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৮:১৫

বিশ্বনবী (সা.)-এর জন্য যে সাহাবি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন

সাদ তাশফীন

বিশ্বনবী (সা.)-এর জন্য যে সাহাবি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন

উহুদ যুদ্ধে প্রিয় নবীজি (সা.)-কে স্বীয় কাঁধে বহন করে রক্ষা করা বীর সাহাবি তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রা.)। তাঁর উপনাম আবু মুহাম্মদ। তিনি মক্কার বিখ্যাত ‘কুরাইশ’ গোত্রের ‘বনু তামিম’ শাখার সন্তান। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির একজন এবং তৃতীয় খলিফা নির্বাচনের জন্য ওমর (রা.)-কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যবিশিষ্ট শুরা-কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি বেশি দানশীলতার কারণে তালহা আল-খায়ের ও তালহা আল-ফায়্যাজ নামে প্রসিদ্ধ। এই উপাধিগুলো তাঁকে দিয়েছেন রাসুল (সা.)। ইবনে আসির (রহ.) তালহা (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে উহুদ যুদ্ধে ‘তালহা আল-খায়ের’, উসরার যুদ্ধে ‘তালহা আল-ফায়্যাজ’ ও হুনাইন যুদ্ধে ‘তালহা আল-জুদ’ বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর একে একে দুই স্ত্রীর বোনকে বিয়ে করেছেন। (আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৩/১৬০; আল-ইসবাহ ৩/৪৩০)

উহুদ যুদ্ধে নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়েও নবীজি (সা.)-কে রক্ষায় জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন। এ কারণে পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.) তাঁর ব্যাপারে বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবিত শহীদকে দেখতে চায়, সে যেন তালহাকে দেখে।

বীর এই সাহাবি ইসলামের সূচনা-পর্বে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আবু বকর (রা.)-এর দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আবু বকর (রা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তি। (উসদুল গাবাহ : ২/৪৬৮)

তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বড়ই চমকপ্রদ। ১৫ বছর বয়সে তিনি একবার কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার সঙ্গে সিরিয়া যান। বসরা শহরে পৌঁছে কাফেলার লোকজন বিভিন্ন স্থানে বেচাকেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তালহা (রা.) তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাজারে ঘোরাফেরা করতে লাগলেন। এমন সময় এক খ্রিস্টান পাদ্রি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে বলল, আপনাদের মধ্যে মক্কার কোনো লোক আছে কি? তালহা ছিলেন তার খুব কাছে। একটু অগ্রসর হয়ে বললেন, আমি মক্কার লোক। পাদ্রি বলল, তোমাদের মধ্যে কি ‘আহমদ’ আত্মপ্রকাশ করেছেন? চলতি মাসে তিনি আত্মপ্রকাশের কথা। তিনি হবেন শেষ নবী। মক্কায় আত্মপ্রকাশ করে কালো পাথর ও খেজুর উদ্যানবিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরত করবেন। হে যুবক, খুব শিগগির তাঁর কাছে যাওয়া উচিত তোমার। তালহা (রা.) বলেন, পাদ্রির এ কথা আমার অন্তরে দারুণভাবে প্রভাব ফেলল। আমি আমার কাফেলাকে ফেলে রেখে একাকী বাহনে সওয়ার হলাম। মক্কায় পৌঁছেই লোকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এরই মধ্যে মক্কায় নতুন কিছু ঘটেছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ নিজেকে নবী বলে দাবি করছে এবং আবু বকর (রা.) তাঁর অনুসারী হয়েছে। এরপর আমি ছুটে গেলাম আবু বকরের কাছে। জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তের দাবি করেছেন, আর আপনি তার অনুসারী হয়েছেন—কথাটা কি সত্য? তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে আমাকেও দাওয়াত দিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন রাসুল (সা.)-এর খেদমতে। আমি কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলাম। (আত-ত্ববাক্বাতুল কুবরা : ৩/১৬১)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর