১৭ মার্চ, ২০২৩ ০৭:৪৪

বদলি হজের বিধিবিধান

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

বদলি হজের বিধিবিধান

কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হওয়ার পর যদি সে হজ না করেই মারা যায় অথবা কোনো কারণে হজের কাজ সম্পাদনে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে তার পক্ষ থেকে অন্য কারও দ্বারা হজ পালন করানোকে বদলি হজ বলে। মহান রব্বুল আলামিন বদলি হজের বিধান আরোপের মাধ্যমে অক্ষম বান্দাদের প্রতি ভালোবাসা, দয়া ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বিদায় হজে খাসআম গোত্রের একজন নারী রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার বাবার ওপর হজ ফরজ হয়েছে। কিন্তু তিনি এত বৃদ্ধ যে, বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হজ করতে পারব? রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, হ্যা, (তাঁর পক্ষ থেকে হজ পালন করতে পারো)। (বুখারি) বদলি হজসংক্রান্ত বিশেষ কিছু বিধান ও মাসায়েল রয়েছে। যে সম্পর্কে বদলি হজ পালনকারী ও বদলি হজে প্রেরণকারী উভয়ের অবগত হওয়া একান্ত জরুরি। নিম্নে তা উপস্থাপন করছি। যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে এবং হজ করার শারীরিক সক্ষমতাও বিদ্যমান আছে তাকে অবশ্যই নিজে হজ আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করানো জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে)

বদলি হজ পালনকারীর হজসংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় প্রেরণকারীকে বহন করতে হবে। (আহকামে হজ) কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও সে নিজের হজ আদায় করেনি, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো মাকরুহ। (আপকে মাসায়েল) নাবালেগ তথা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ করানো যাবে না। (আপকে মাসায়েল) নারীর পক্ষ থেকে পুরুষ এবং পুরুষের পক্ষ থেকে নারী বদলি হজ পালন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। (আপকে মাসায়েল) বদলি হজে প্রেরণকারীর মতো বদলি হজ পালনকারীও অনুরূপ সওয়াবের অধিকারী হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃতের পক্ষ থেকে বদলি হজ আদায় করল, সেও মৃত ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। (মাজমাউজ জাওয়াইদ) বদলি হজ পালনকারী হজে ইফরাদের ইহরাম বাঁধবে এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। তবে প্রেরকের অনুমতি সাপেক্ষে সে হজে কেরান বা হজে তামাত্তুর ইহরাম বাঁধতে পারবে; সে ক্ষেত্রে কোরবানির খরচ বদলি হজ পালনকারীর নিজ জিম্মায় বর্তাবে। তবে হ্যাঁ, প্রেরণকারী স্বেচ্ছায় দিয়ে দিলেও জায়েজ আছে। (আপকে মাসায়েল) বদলি হজ পালনকারী ব্যক্তিকে দীনদার আমানতদার খোদাভীরু ও হজের আহকাম সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া চাই। এক ব্যক্তি যদি একসঙ্গে একাধিক মানুষের পক্ষ থেকে বদলি হজের ইহরাম বাঁধে, তাহলে কারও হজ আদায় হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া) বদলি হজের জন্য হজ আদায়কারী কোনোরূপ পারিশ্রমিক বা বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে না। কেননা হজ একটি পবিত্র ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় নেওয়া বা দেওয়া জায়েজ নয়। (রদ্দুল মুখতার) বদলি হজের মতো বদলি ওমরাহও করা যায়। এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমার বাবা অতিশয় বৃদ্ধ। তিনি হজ ও ওমরাহ করতে অক্ষম। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ আদায় করতে পারব? রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, তুমি তোমার বাবার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরাহ আদায় কর। (তিরমিজি)

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর