বৃষ্টি মহান আল্লাহর অপার রহমত। তিনি নিজেই একে নিজের রহমত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি তারা নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমতকে ছড়িয়ে দেন। তিনিই অভিভাবক, প্রশংসিত।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৮)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াত যেন বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। কয়েক দিনের তীব্র গরমে নাকাল মানুষ যখন হতাশায় পড়ে গিয়েছিল, ঠিক তখনই মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের বৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়ে আবহাওয়া শীতল করে দিয়েছেন। প্রকৃতিকে সজীবতা দিয়েছেন। এভাবেই মহান আল্লাহ রহমতের বৃষ্টির মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেন।
পশুপাখি ও উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখেন, তেমনি তিনি এই পানিকে সঠিকভাবে সংরক্ষণও করেন। মহান আল্লাহ পানিকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আকাশে তুলে বৃষ্টিরূপে বর্ষণ করেন। যে পদ্ধতিকে আমরা পানিচক্র বলে থাকি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি বৃষ্টিসঞ্চারী বাতাস প্রেরণ করি, অতঃপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। অতঃপর তা তোমাদের পান করতে দিই। তোমরা এর ভাণ্ডাররক্ষক নও।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২২)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে মহান আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণের রহস্য উদঘাটন করেছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি কি দেখনি যে আল্লাহ মেঘমালাকে পরিচালিত করেন, তারপর তিনি সেগুলোকে একত্রে জুড়ে দেন, তারপর সেগুলো স্তূপীকৃত করেন, তারপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্যে থেকে বৃষ্টির বের হয়। আর তিনি আকাশে স্থিত মেঘমালার পাহাড় থেকে শিলা বর্ষণ করেন। তারপর তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন। আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা সরিয়ে দেন। এর বিদ্যুতের ঝলক দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ৪৩)
পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো দ্বারা বোঝা যায়, বৃষ্টি বর্ষণ ও মেঘ তৈরিতে বাতাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। মহান আল্লাহ যদি এই বাতাস বন্ধ করে দেন, বা বাতাসের গতি পরিবর্তন করে দেন, তাহলে বৃষ্টিপাত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিজ্ঞানের মতেও বৃষ্টিপাতে বাতাসের ভূমিকা আছে। এ জন্যই বছরের সব সময় বৃষ্টি সমান হয় না। শীতকালে কম হয় এবং বর্ষাকালে বেশি হয়। শীতকালে উত্তর দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। উত্তর দিক থেকে যে বাতাস আসে তাতে কোনো জলীয়বাষ্প থাকে না বিধায় ওই সময় বৃষ্টিপাত হয় না। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যার সঙ্গে সমুদ্র থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প ভেসে আসে এবং তা দ্বারা প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বৃষ্টি এ সময় হয়।
মহান আল্লাহর সৃষ্টির এই রহস্যগুলো যখন মানুষের কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, তখন মানুষ এগুলোকে কাজে লাগিয়ে এগুলো থেকে উপকৃত হতেও শুরু করেছে। এমনকি কয়েক দশক ধরে মানুষ কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতেও সক্ষম হয়েছে। কিছু দেশ উড়োজাহাজের মাধ্যমে মেঘের ওপর আয়োডাইডের ছোট ছোট কণা ছড়িয়ে দেয়, ফলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তা বৃষ্টিতে
রূপান্তরিত হয়। যদিও এই পদ্ধতি কখনো কখনো বিপর্যয়ও নামাতে পারে। তারপরও বলতে হবে বাতাস, মেঘ ও বৃষ্টির এই রহস্য মানুষ অনেক দিন পর বুঝতে পারলেও মহান আল্লাহ দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এর রহস্যের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। কোরআনের আরেকটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। ফলে তা মেঘমালাকে (আকাশে) সঞ্চারিত করে। পরে তিনি মেঘমালা যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্যে থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা পৌঁছে দেন। তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা : আর-রুম, আয়াত : ৪৮)
অন্য আয়াতে বর্ণিত আছে, ‘তাঁর আরেকটি নিদর্শন হলো এই যে তুমি জমিনকে দেখতে পাও শুষ্ক-অনুর্বর, অতঃপর যখন আমি তার ওপর পানি বর্ষণ করি তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। নিশ্চয়ই যিনি জমিনকে জীবিত করেন তিনি মৃতদেরও জীবিতকারী। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা : হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৯) এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য নিদর্শনের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টিজগেক উপকৃত করেন এবং গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তাঁর প্রবল শক্তির জানান দেন।
বিডি-প্রতিদিন/শআ