কুয়েত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাফেজ আনাস মাহফুজ (১২)। কুয়েত সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ৭৪ দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। হাফেজ আনাস মাহফুজ মারকাযু ফয়জিল কুরআন আল ইসলামী, ঢাকার শিক্ষার্থী। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মুরতাজা হাসান ফয়েজীর সহযোগিতায় সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আতাউর রহমান খসরু।
প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছ?
হাফেজ আনাস : ওয়ালাইকুমুস সালাম, ওয়া রহমাতুল্লাহ। ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ!
প্রশ্ন: আমরা খুব আনন্দিত যে তুমি তোমার জন্য, তোমার মা-বাবা, শিক্ষক ও পরিবারের জন্য, সর্বোপরি পুরো দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছ।
হাফেজ আনাস : এটা আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি আমাকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সৌভাগ্য দিয়েছেন এবং আমাকে ও আমার দেশকে সম্মানিত করেছেন।
প্রশ্ন : প্রতিযোগিতার দিনগুলো কেমন ছিল?
হাফেজ আনাস : আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো ছিল। মারকাযু ফয়জিল কুরআন অনেক ভালো একটি মাদরাসা। শিক্ষকরা আমাদের শিখিয়েছেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কিভাবে তিলাওয়াত করতে হয়, সেখানে গেলে কী কী নিয়মে চলতে হয়।
এ ছাড়া আমাদের সম্মানিত শিক্ষক হাফেজ আবদুল্লাহ আল মামুন আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছেন এবং শান্ত ও স্থির থেকে সব কিছু করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই বিষয়গুলো সহজ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! সব কিছু সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে।
প্রশ্ন : যখন তোমার নাম ঘোষণা হলো তখন তোমার কেমন লেগেছিল? তখন কার কথা মনে পড়েছিল?
হাফেজ আনাস : সেই মুহূর্তে অনেক বেশি খুশি লাগছিল। নাম ঘোষণার আগ পর্যন্ত মনের ভেতর ভয় ছিল। আমার নাম শুনে খুশিতে মন ভরে যায়। তখন সবার কথাই মনে পড়েছিল। আব্বুর কথা বেশি মনে পড়ছিল। কেননা তিনি দূরে থাকেন। আম্মু ও শিক্ষকদের কথাও মনে পড়ছিল। কারণ সবাই আমার জন্য কষ্ট করেছেন, দোয়া করেছেন।
প্রশ্ন: ৭৪টি দেশের ভেতর তুমি প্রথম স্থান অধিকার করেছ। তোমার অনুভূতি কী?
হাফেজ আনাস : আলহামদুলিল্লাহ! খুব ভালো লাগছে। আল্লাহর লাখো-কোটি শুকরিয়া। তিনি আমাকে কবুল করেছেন বলেই আমি প্রথম স্থান অধিকার করতে পেরেছি।
প্রশ্ন : তোমার এই বিশ্বজয়ের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?
হাফেজ আনাস : সবচেয়ে বেশি অবদান আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের। বিশেষ করে মারকাযু ফয়জিল কুরআন মাদরাসার শিক্ষকরা আমার পেছনে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তারা আমাকে সুন্দরভাবে শিখিয়েছেন, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমি পুরস্কার জেতার পর মনে হয়েছে তারাই আমার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন। মা-বাবাও আমাকে শিখিয়েছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন। আমার আম্মু একজন হাফেজা হওয়ায় তিনি আমার লেখাপড়ার খোঁজখবর রাখতে পেরেছেন। আমার সহপাঠীরা আমার জন্য দোয়া করেছেন। তাই আমি সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
প্রশ্ন : কখনো ভেবেছিলে, একদিন বিশ্বজয় করবে?
হাফেজ আনাস : স্বপ্ন তো ছিলই। আমি যে মাদরাসায় পড়ি সেখানে শিক্ষার্থীদের এই স্বপ্ন ও সাহসের সঙ্গে গড়ে তোলা হয়। আমাদের বিশেষভাবে মশক (চর্চা ও প্রশিক্ষণ) করানো হয়। এ ছাড়া যেহেতু মারকাযু ফয়জিল কুরআনের কয়েকজন শিক্ষার্থী এর আগে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ করেছে, তাই আমিও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতাম। তবে পূরণ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে কবুল করেছেন এবং আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমার শিক্ষক ও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। এত তাড়াতাড়ি স্বপ্ন পূরণ হবে তা ভাবিনি।
প্রশ্ন : মারকাযু ফয়জিল কুরআন সম্পর্কে কিছু বলো?
হাফেজ আনাস : আলহামদুলিল্লাহ! মারকাযু ফয়জিল কুরআন দেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। এখানকার লেখাপড়ার পরিবেশ অন্য সব জায়গার তুলনায় একটু ভিন্ন। এখানে সব কিছুই নিয়ম মেনে করতে হয়। শিক্ষকরা সব সময় আমাদের ইয়াদ (মুখস্থ) ও তিলাওয়াতের উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন। ছাত্রদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখান। এ জন্যই এক বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমরা পুরস্কার লাভ করতে পেরেছি। এই মাদরাসা ছাত্রদের শারীরিক সুস্থতা এবং তারবিয়াতকেও (নৈতিক উন্নতি) বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
প্রশ্ন: জীবনে কী হতে চাও?
হাফেজ আনাস : আল্লাহর অনুগ্রহে আমি হাফেজ হয়েছি। আমি বড় একজন আলেম হতে চাই, দ্বিনের একজন দায়ি (দ্বিনপ্রচারক) হতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি একজন হক্কানি রব্বানি (আল্লাহওয়ালা ও গবেষক) আলেম হতে পারি।
প্রশ্ন : সবার উদ্দেশে কিছু বলো?
হাফেজ আনাস : আমি সবার কাছে আমার জন্য, আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আমার মাদরাসা ও শিক্ষকদের জন্য দোয়া চাই।