পাপ কাজের প্রতি আগ্রহ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বারবার ক্ষমা করার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ যদি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু না হতেন তাহলে মানুষের জন্য পরকাল নিশ্চিত কষ্টদায়ক হতো। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১১০)
আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও গোপনীয়তা অবলম্বনকারী—এ দুটি মহান গুণ সামনে রেখে আমরা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখতে পাবো পাপ গোপন রাখার অসীম তাৎপর্য। নিজের পাপ ও অন্যের পাপ গোপন রাখার জন্য ইসলামে তাগিদ দেওয়া হয়েছেল।
নিজের পাপ গোপন রাখার তাৎপর্য
শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সব উম্মতকে কিয়ামতের দিন ক্ষমা করা হবে। শর্ত হলো, নিজের কোনো পাপ হয়ে গেলে সেটি গোপন রাখতে হবে।
গোপনে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কাউকে বলে বা প্রচার করে সাক্ষী বানানো যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার সব উম্মতকে ক্ষমা করা হবে, তবে প্রকাশকারী ছাড়া। আর নিশ্চয়ই এটি বড় অন্যায় যে কোনো ব্যক্তি রাতের বেলা অপরাধ করল, যা আল্লাহ গোপন রাখলেন।
কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)
এ ছাড়া কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা মুমিন ব্যক্তিকে অত্যন্ত কাছাকাছি নিয়ে, স্বীয় আবরণে আবৃত করে তার পাপের স্বীকারোক্তি নিয়ে বলবেন, ‘আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দেব। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেওয়া হবে।
কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে, এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, জালিমদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪১)
অন্যের পাপ গোপন রাখার তাৎপর্য
অন্যের পাপ গোপন রাখার ফজিলত অনেক বেশি। দুনিয়ায় অন্যের দোষ গোপন রাখলে কিয়ামতের দিন নিজের দোষ গোপন রাখা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি অন্য কোনো লোকের ত্রুটি-বিচ্যুতি দুনিয়ায় আড়াল করে রাখে আল্লাহ তাআলা তার ত্রুটি-বিচ্যুতি কিয়ামত দিবসে আড়াল করে রাখবেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৯)
অন্যের পাপ প্রকাশ করে সম্মানহানি করা নিষিদ্ধ
কারো পাপ অপরের কাছে প্রচার করে তার সম্মানহানি করা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। আর মুমিনের সম্মান আল্লাহ তাআলার নিকট পবিত্র কাবার থেকেও বেশি। যেমনটি ইবনে উমর (রা.) কাবার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমি কতই না মহান! তুমি কতই না সম্মানিত, কিন্তু তোমার চেয়েও মুমিনের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক বেশি।’
তিনি আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে নিয়োজিত হবে, আল্লাহ তাআলা তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দেবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)
তবে যদি কারো এমন পাপ হয়, যা ব্যক্তি বা সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ, তবে তা প্রকাশ করা জরুরিও হবে। যেমন—ডাকাতি করা, বৃহৎ কোনো চক্রান্ত করা ইত্যাদি। কোনো মুমিন ব্যক্তির করা আল্লাহর হকসংক্রান্ত কোনো গোপন পাপ সম্পর্কে জানতে পারলে তা অবশ্যই গোপন রাখতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন