কলকাতায় ৩ দিনব্যাপী বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে নন্দন-২ প্রেক্ষাগৃহে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস’ (আইসিসিআর) এর মহাপরিচালক রীভা গাঙ্গুলী, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব, চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, অভিনেতা ফেরদৌস, অভিনেত্রী জয়া আহসান প্রমুখ।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি যেখানে এক, সেখানে শুধুমাত্র রাজনৈতিক সীমারেখা বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কোন শিল্পকর্ম, সংস্কৃতিকে বিভক্ত করতে পারে না।
এক উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ফেসবুক, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয়ুব বাচ্চু বা হিরো আলমের মতো মানুষরা সীমানা পেরিয়ে এপার বাংলাতেও সমান জনপ্রিয়। দুই দেশ আলাদা হলেও সংস্কৃতির মধ্যে কোন সীমারেখা থাকা উচিত নয়। কোনরকম বিভাজন ছাড়াই আমাদের দুই বাংলার সংস্কৃতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশের সরকারকেই একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে ভাষার জন্য অনেক জাতি, রাষ্ট্র সংগ্রাম করেছে কিন্তু তারা তাদের সেই আন্দোলন বা সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে যেতে পারেনি, কিন্তু আমরা পেরেছি। অনেক লড়াইয়ের পর আজ একুশে ফেব্রুয়ারী শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়, এটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার জন্য।
গৌতম দেব বলেন, ‘দুই বাংলার সংস্কৃতি, খাদ্যাভাষ, ঐতিহ্য এক। দুই দেশের মধ্যে একটা কাঁটাতার আছে বটে কিন্তু দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হলে এই বিভেদ কেটে যাবে। এব্যাপারে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অনবরত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরার মধ্যে বিমান পরিষেবা চালুর আহ্বানও জানান তিনি। তার অভিমত, বাংলাদেশ থেকে বহু পর্যটক আসেন, অনেক শিক্ষার্থীও এখানে পড়াশোনা করতে আসেন-সেক্ষেত্রে এই বাগডোগরায় বিমান পরিষেবা চালু হলে প্রভূত উপকার হবে। দুই দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ় গড়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রীর ঢাকা-বাগডোগরার মধ্যে বিমান পরিষেবার চালুর প্রস্তাবটি সম্পর্কে হাসান মাহমুদ বলেন, দেশে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশ বিমান সংস্থাগুলির সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রীভা গাঙ্গুলী বলেন, ‘বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে।
এই ধরনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মানুষে মানুষে সংযোগ বৃদ্ধি পাবে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে।’ কলকাতার মতো ঢাকাতেও অনুরূপ একটি চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হবে বলেও জানান ভারতীয় হাইকমিশনার।
অভিনেত্রী জয়া আহসানের বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবের বড় প্রয়োজন ছিল। তবে উৎসবের সূচনা করেই যেন থেমে না থাকে, তার যেন ধারাবাহিকতা থাকে।’ দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আদান-প্রদান সহজ করারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে দুই বাংলার ছবি সকলের কাছে সহজে পৌঁছে যাবে।’
অভিনেতা ফেরদৌস বলেন, ‘একই ভাষা, সংস্কৃতি হওয়ার কারণে এপার বাংলায় বাংলাদেশের ছবির প্রতি অনেক চাহিদা রয়েছে। আগে ডিভিডি-র মাধ্যমে বাংলাদেশের ছবি দেখার সুযোগ হতো কিন্তু এই ধরনের চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ছবি এপার বাংলায় দেখার সুযোগ হচ্ছে-এটা একটা বড় পাওনা।’
বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এই চলচ্চিত্র উৎসব চলবে। কলকাতার নন্দন-২, ৩ এবং নজরুল তীর্থ-২ প্রেক্ষাগৃহে ওপার বাংলার মোট ২৩ টি ছবি প্রদর্শিত হবে এই চলচ্চিত্র উৎসবে। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলির মধ্যে আছে- ‘জন্মভূমি, পুত্র, আমাদের বঙ্গবন্ধু, পোস্টমাস্টার একাত্তর, স্বপ্নজাল, দহন, হেডমাস্টার, ঘেটুপুত্র কমলা, গহীন বালুচর, নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার, মহুয়া সুন্দরী, গেরিলা প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল