৯ জুন, ২০১৯ ১৯:৩৬

নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ

লোকসভা নির্বাচনের পরও সহিংসতা অব্যাহত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাজ্যটির উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সন্দেশখালির ন্যাজাট থানার অন্তর্গত ভাঙিপাড়া গ্রাম। বেসরকারিভাবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও পুলিশের দাবি নিহতের সংখ্যা তিন। নিহতদের মধ্যে একজন তৃণমূল কর্মী, বাকী দুইজন বিজেপি কর্মী। আহত দুই পক্ষেরই একাধিক কর্মী। 

পুলিশ সূত্রে খবর, দলীয় পতাকা খোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই শনিবার দুপুর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙিপাড়া এলাকা। বিকাল গড়িয়ে রাতে তা চরম আকার ধারণ করে। দুইপক্ষের মধ্যে শুরু হয় বোমাবাজি, গুলি। তৃণমূল কর্মী কায়ুম আলিকে প্রথমে গুলি কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। পাল্টা বিজেপির দুই কর্মী সুকান্ত মন্ডল ও প্রদীপ মন্ডলকে তাড়া করে একটি মাছের খামারে নিয়ে যায় তৃণমূল আশ্রিত দুর্বৃত্তরা। সেখানে ওই দুই বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ের দাবি তাদের আরও প্রায় ছয়জন কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। বিজেপিরও পাল্টা দাবি ওই ঘটনার পর থেকে তাদেরও কয়েকজনের খোঁজ মিলছে না। 

শনিবারের পর থেকে রবিবার সকাল থেকে গোটা ন্যাজাট এলাকা থমথমে। আতঙ্ক স্থানীয় মানুষজন। দোকান-পাট বন্ধ, রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা অত্যন্ত কম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বসিরহাট মহুকুমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে বিবৃতি দেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহান। এই ঘটনা নিয়ে শনিবারই রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও রবিবার দুপুর পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলেননি। তবে বিজেপি নেতা মুকুল রায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ঘটনার বিস্তারিত জানান। 

ঘটনার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এদিন দুপুরের দিকে ভাঙিপাড়া গ্রামে যান রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সংসদীয় মন্ত্রী তাপস রায়, ফায়ার সার্ভিস মন্ত্রী সুজিত বসু, সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র, বিধায়ক নির্মল ঘোষসহ তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। নিহত দলীয় কর্মী কায়ুম মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা। অন্যদিকে আহত বিজেপি কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যান বিজেপির জাতীয় কার্যকরি সদস্য মুকুল রায়, বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংসহ এক প্রতিনিধি দল। 

এদিকে খুন-পাল্টা খুন নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতর। রবিবারই বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের অভিযোগ, ‘সারা বাংলা জুড়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশান্তি করার জন্য উস্কানি দিচ্ছেন। শনিবার রাতে ভাঙিপাড়াতে আমাদের কর্মীরা তৃণমূলের দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। আরও অনেক মানুষ গ্রাম ছাড়া হয়ে গেছেন। এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসের পরিবেশ চলছে।’ 

তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের নেতৃত্বেই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ মুকুল রায়ের। গোটা ঘটনাটি পুলিশের তরফে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার। 

অন্যদিকে, বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, ‘যারা গিয়ে উস্কানি, প্ররোচনা দিচ্ছে তারাই খুন রক্তাপাত ঘটাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন ‘এরা (বিজেপি) উন্নয়নের নামে নেই, বাংলার হয়ে কথা বলছে না-কেবলমাত্র তৃণমূল কর্মীদের খুন, জখম, তাদের বাড়ি লুট-এই পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায়নের জন্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকে অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে, সন্দেশখালিতে দলীয় কর্মীদের খুনের প্রতিবাদে কলকাতাসহ রাজ্যজুড়েই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নেয় বিজেপি। একাধিক জায়গায় পথ অবরোধে সামিল হয় বিজেপি কর্মীরা। ব্যহত হয় যান চলাচল। এসময় কোথাও কোথাও পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগে একাধিক বিজেপি কর্মীকে আটকও করে পুলিশ। 

বিডি-প্রতিদিন/০৯ জুন, ২০১৯/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর