শিরোনাম
২৪ অক্টোবর, ২০২০ ১৯:৫৬

পশ্চিমবঙ্গে এবার ভিড় নেই দুর্গাপূজায়, সব চলছে অনলাইনে!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা:

পশ্চিমবঙ্গে এবার ভিড় নেই দুর্গাপূজায়, সব চলছে অনলাইনে!

দুর্গাপূজার প্যান্ডেল আছে, প্রতিমাও আছে, আছে ঝকমারি আলোর রোশনাই। কেবল মা’এর কাছে যাওয়াই নিষেধ। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে একদিকে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পূজা মন্ডপকে ‘নো এন্ট্রি জোন’ বলে কলকাতা হাইকোর্টের ঘোষণা দেওয়া এবং তা পালন করতে পূজা উদ্যোক্তাদের সক্রিয় ভূমিকার ফলে মহাসপ্তমীর সন্ধ্যা থেকে অষ্টমীর বিকাল পর্যন্ত দর্শক শূণ্য শহরের রাজপথ। 

গত বছরেও পূজার শুরুতে যেখানে প্রতিটি প্যান্ডেলে উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে ঘাম ছুটে যেতো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মানুষগুলোর। এবছর এখনও পর্যন্ত কার্যত 'মাছি তাড়াতে' হচ্ছে তাদের।  

করোনার সংক্রমণ এবং বিরূপ প্রকৃতির কারণে শুক্রবার মহাসপ্তমীতে উত্তর কলকাতার হাতিবাগান সার্বজনীন, চালতাবাগান থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ, দেশপ্রিয় পার্ক, সুরুচি সঙ্ঘ-সব জায়গায়তেই প্রতিমা দর্শন বা থিমের কারুকাজ দেখতে সেই চেনা ভিড় নেই। হাতে গোনা কয়েকজন ব্যারিকেড দেওয়া ‘নো এন্ট্রি জোন’ থেকেই প্রতিমা দর্শন করে বিদায় নিয়েছেন। 

কলেজ স্কোয়ার, বেলেঘাতা ৩৩ পল্লি, ত্রিধারা সম্মিলনী, মহম্মদ আলি পার্ক, কাশী বোস লেন সর্বজনীন’এর মতো দুর্গাপূজা মন্ডপগুলিতেও প্রতিমা দর্শন একপ্রকার বন্ধই ছিল। কারণ আদালতের বেঁধে দেওয়ার ১০ মিটার দূরত্ব থেকে মন্ডপের ভিতরে থাকার দুর্গা প্রতিমা দর্শন কোনভাবেই সম্ভবপর হয়নি।
 
কলকাতায় ঠাকুর দেখতে এসে ম্যাডক্স স্কোয়ার দুর্গাপূজা কমিটির মাঠে সময় কাটান নি-এমন মানুষকে খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। কিন্তু করোনার কথা মাথায় রেখে সেখানেও এবার ভার্চুয়াল দর্শন অর্থাৎ ইউটিউব’এর মাধ্যমে পূজার কয়টা দিন আরতি, পুষ্পাঞ্জলি এবং অন্যান্য আচার পালন দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই ব্যবস্থা করা হয়েছে সুরুচি সঙ্ঘ, মুদিয়ালি ক্লাব, ত্রিধারা সম্মিলনী, সন্তোষপুর লেক পল্লীর ক্লাবের পূজাও। 

দক্ষিণ কলকাতার নামী পূজা মন্ডপ শিবমন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে পার্থ ঘোষ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর এখনও পর্যন্ত দর্শক সংখ্যা কয়েকগুণ কম। যারা আসছেন তারা রাস্তা থেকে ঠাকুর দেখবেন এবং প্যান্ডেলের বাইরের দিক দেখেই তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। কারণ এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং আমাদের সকলকে সেটা মেনে নিতে হবে।’ যদিও কোন কোন পূজা উদ্যোক্তাদের আক্ষেপ আদালত এমন নির্দেশ দেব-তা আগে জানা থাকলে দর্শকদের ভালো করে পূজা দেখানোর ব্যবস্থা করা যেতো।  

কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারাও বলছেন যে আদালতের নির্দেশের ফলে রাস্তায় ও পূজা মন্ডপগুলিতে দর্শকদের হুড়োহুড়ি নেই এবং কারও মধ্যে এই নির্দেশ লঙ্ঘন করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে অন্য বছরগুলিতে কলকাতা শহরে পূজার সময় আইন-শৃঙ্খলা সহ অন্য দায়িত্ব পালনে যে পরিমাণ পুলিশ সদস্য থাকতো তার সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। 

করোনার আবহে কলকাতার পাশাপাশি জেলার পূজা প্যান্ডেলগুলিতে অভিনব পন্থা নিয়েছে। মহাষ্টমীর সকালেও অনেক মন্ডপে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প সংখ্যক মানুষকে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কোন কোন ক্লাবের তরফে ঘোষনা করা হয় পুরোহিতের উচ্চারণ করা মন্ত্র শুনে ঘরে বসেই অঞ্জলি দিতে এবং পরে অঞ্জলি দেওয়া সেই ফুল-বেলপাতা-দুব্যা সময় করে ক্লাবের বাক্সে জমা দিয়ে যেতে। পরে তা মা’এর পায়ে দেওয়া হবে। 

করোনা পরিস্থিতিতে মন্ডপে মন্ডপে পূজার গানের সাথেই নিয়মিত ভাবে বেজে উঠছে করোনা সতর্কতার ঘোষণা। পার্ক-ক্লাব-রেস্তোরাঁগুলিতেও আড্ডার বদলে বাড়িতে বসে ভার্চুয়াল আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে। অনলাইনে খাবার অর্ডার নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। 

করোনা কথা মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জির কালীঘাটের বাড়ি-কাম-অফিসেও বিজয়া দশমীর দিন বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়েছে। এব্যাপারে তৃণমূলের মহাসচবি জানান ‘বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ওইদিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আসেন। কিন্তু করোনা আবহে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর বদলে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই শুভেচ্ছা জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর