৩ জুন, ২০২৩ ১০:৪৮

কীভাবে ঘটল ভারতের সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, যা জানা যাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক

কীভাবে ঘটল ভারতের সেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, যা জানা যাচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

ভারতের ওড়িশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৯০০ জনের বেশি। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রেনের ভেতরে অনেকেই আটকা পড়ে আছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কীভাবে ঘটল ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা?

জানা গেছে, নির্ধারিত সময়েই পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় করমন্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এটিকে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ‘কিং’ বা রাজাও বলা হয়। বহু মানুষ প্রতিদিন এই ট্রেনে করেই দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসা করাতে। এমনকি বাংলাদেশের মানুষরাও পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই ট্রেনে করে দক্ষিণ ভারতের ওই শহরে গিয়ে থাকেন।

ঘড়ির কাঁটা তখন স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পেরিয়েছে মাত্র। ওড়িশার বালাসোর স্টেশন পার হওয়ার পর আচমকাই বিকট শব্দ। ক্রমশ গতি কমতে থাকে করমন্ডল এক্সপ্রেসের। একাধিক বগি ডান দিকে হেলে পড়তে থাকে বিপজ্জনকভাবে।

ট্রেনে উপস্থিত যাত্রীদের কয়েকজনের বক্তব্য, গতি কমার সঙ্গে সঙ্গেই বগি হেলে যাওয়া টের পেতেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ততক্ষণে আরও খানিকটা হেলে যায় বগি।  প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রায় এক কিলোমিটার পথ এভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে থাকে ট্রেনটি।

করমন্ডল ছিল আপ লাইনে। এটির লাইনচ্যুত কয়েকটি বগি গিয়ে আড়াআড়িভাবে পড়ে পাশের ডাউন লাইনের উপর। ততক্ষণে করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়।

জানা গেছে, একটি মালগাড়ি করমন্ডল এক্সপ্রেসের সামনে চলছিল। কোনওভাবে করমন্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে সেই মালগাড়ির পিছনে।

মালগাড়ির পিছনে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির বগির উপরে উঠে যায়। পিছনে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশির ভাগ বগি।

সেই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী আরেকটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যা লাইনের উপর আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকা করমন্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগির উপর দিয়ে চলে যায়।

ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমন্ডলের বগির সঙ্গে সংঘর্ষে লাইনচ্যুত হয়ে যায় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক বগি। ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীরা।

দুর্ঘটনার অন্য একটি ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। রেলকর্মীদের একটি অংশের দাবি, প্রথমে লাইনচ্যুত হয় বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। হাওড়াগামী ট্রেনের কয়েকটি বগি আপ লাইনে এসে পড়ে আড়াআড়িভাবে।

সেই সময় আপ লাইনে ছুটে আসছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস। হাওড়াগামী ট্রেনের লাইনচ্যুত হয়ে যাওয়া বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দ্রুতগতিতে ছুটে আসা করমন্ডল এক্সপ্রেসের।

এতে করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে অন্যপাশের লাইনে (থার্ড লাইন) দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। ধাক্কার অভিঘাতে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।

দুর্ঘটনার জেরে ট্রেনের যাত্রীদের একটি অংশ আটকে পড়েন ছিটকে পড়া বগিগুলোর মধ্যে। প্রাথমিকভাবে ট্রেনের যাত্রীরাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। রাতের অন্ধকারে সমস্যা আরও বাড়ে।

দুর্ঘটনা যে এলাকায় হয়েছে সেই এলাকাটি নির্জন। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারকাজে নামতে পারেনি। তবে কিছুক্ষণ পরই সেখানে হাজির হতে থাকেন আশপাশের বাসিন্দারা।

ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু সেই সময় মূল সমস্যা হয় আলোর অভাব। ট্রেনের কোনও আলো জ্বলছিল না। তার উপর নির্জন এলাকা হওয়ায় নেই কোনও সড়কবাতিও।

টর্চ লাইট এবং মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে শুরু হয় উদ্ধারকাজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখতে পান, এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দেহাংশ, যাত্রীদের জিনিসপত্র, খাবার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বগি থেকে ভেসে আসতে থাকে কান্না, চিৎকারের আওয়াজ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য অকুস্থলে এসে পৌঁছায় রেলের উদ্ধারকারী দল। নেমে যায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শুরু হয় উদ্ধারকাজ।

ওড়িশায় দুর্ঘটনার কারণে হাওড়া, শালিমার থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়। স্থানীয় রেল সূত্রের দাবি, ৫১টি ট্রেন ঘুরপথে বা সংক্ষিপ্ত পথে চালানো হচ্ছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথও বদলে দেওয়া হয়। সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর