শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

অযত্ন অবহেলায় নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ী

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

অযত্ন অবহেলায় নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ী

নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে অবস্থিত প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বলিহার রাজবাড়ি। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে রাজরাজেশ্বরী দেবীর মন্দির ও নয় চাকার রথের জন্য এটি প্রসিদ্ধ। নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।

জানা যায়, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সনদবলে নওগাঁর বলিহারের  এক জমিদার জায়গির লাভ করেন। জমিদারদের মধ্যে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে বলিহারে রাজরাজেশ্বরী দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মন্দিরে রাজেশ্বরী দেবীর অপরূপা পিতলের মূর্তি স্থাপন করেন। বলিহারের নয় চাকার রথ এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল। প্রাসাদের কিছুটা দূরেই ছিল বিশাল বাগানবাড়ি। বসত সেখানে নিয়মিত জলসা। রাজবাড়ির একটি ভবন স্থানীয় একটি স্কুলের ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছিল। নতুন স্কুল ভবন নির্মিত হওয়ায় সেখানে ক্লাসরুম চলে যাওয়ায় রাজবাড়ির ভবনটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রাসাদ কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত বিশাল দেবালয়টি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জঙ্গল পরিষ্কার করে আবারও পূজা-অর্চনা শুরু করেছেন। প্রাসাদের সিংহদুয়ার এখন অনেকটাই শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদের পেছনের মালিপাড়ায় এখনো বিশাল আকারের পাশাপাশি দুটি শিবলিঙ্গ আছে। সেখানে পূজা হয়। কালো পাথরের শিবলিঙ্গ যাতে চুরি হয়ে না যায় সে কারণে গোড়ায় খোয়া সিমেন্ট দিয়ে মজবুত করে ঢালাই দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। বলিহারের রাজাদের মধ্যে অনেকেই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর ছিলেন লেখক। তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলি প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড অন্যতম। দেশ বিভাগের সময় এবং জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে অন্যসব রাজার মতো বলিহারের রাজার উত্তরাধিকারী বিমলেন্দু রায় চলে যান ভারতে। এরপর প্রাসাদ ভবনটি রাজপরিবারের অন্যান্য কর্মচারী দেখভাল করতে থাকেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এবং পরে লুট হয়ে যায় রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন, আসবাবপত্র, জানালা-দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী। দর্শনীয় প্রাসাদটির কয়েকটি ভবন বর্তমানে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে একসময়ের বলিহার রাজাদের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে।

কথিত আছে, বলিহারের জমিদারিতে ৩৩০টি দিঘি ও পুকুর ছিল। এখনো অনেক দিঘি ও পুকুর রয়েছে। নামগুলো শ্রুতিমধুর যেমন মালাহার, সীতাহার, বলিহার, অÍাহার নানান নামেই ছিল দিঘি ও পুকুরগুলো পরিচিত। শৌখিন রাজাদের ছিল মিনি চিড়িয়াখানা। সেখানে ছিল বাঘ, ভল­ুক, বানর, হরিণসহ নানান প্রজাতির পশু ও পাখি। জনশ্রুতি আছে, মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ বার ভুঁইয়াকে দমন করতে এ দেশে আসেন। তিনি তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে একপর্যায়ে বলিহার পৌঁছেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় সৈন্যরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বিশ্রামের জন্য ও মানসিংহের প্রেরিত গুপ্তচরের মাধ্যমে বার ভুঁইয়াদের খবর জানার জন্য যাত্রাবিরতি করেন সেনাপতি মানসিংহ। ওই সময় চলছিল বরেন্দ্র অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুম। বেশি দিন বসে থাকলে সৈন্যরা অলস হয়ে যেতে পারে ভেবে মানসিংহ সৈন্যবাহিনী দিয়ে ওই ৩৩০টি দিঘি ও পুকুর খনন করান।

সর্বশেষ খবর