মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

ইউরিয়ার দাম বাড়বে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর কথা শুনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সারের দাম বাড়বে না। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিল্প সচিবকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ কোনো সচিব নিতে পারেন না। এখতিয়ার নাই।’ গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ ছাড়া বৈঠকে অনুমোদনহীন বাটখারা উৎপাদন, ব্যবহার ও পণ্যের ওজনে অনিয়মের সাজা বাড়িয়ে স্ট্যান্ডার্ডস ওজন ও পরিমাপ আইন, ২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ইউরিয়া সারের দাম নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয় চিঠি চালাচালি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বরাবরই আপত্তি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ ধরনের কোনো উদ্যোগ সচিব নিতে পারেন না। এখতিয়ার নাই।’  তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানো সরকারি সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত সচিব নিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যে সারের জন্য এত লড়াই, সেই সারের দাম বাড়ানো হবে না। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার চাল আমদানির চেয়ে ভর্তুকি ভালো।’ বৈঠক সূত্র জানায়, শিল্প সচিব কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে, এমনকি শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা না বলে ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সম্প্রতি হঠাৎ করেই কথা বলেছেন। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, দেশে গত মৌসুমে ইউরিয়া সারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল দুই হাজার ৩৩৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ বছরও একই রকম ভর্তুকি দিতে হবে। ইউরিয়া সারে ভর্তুকি দেওয়ার ফলে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি সার ১৭ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি মৌসুমে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা কমবেশি ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১০ লাখ মেট্রিক টন আমরা নিজেরা উৎপাদন করি। বাকি সার আমদানি করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন করতে সক্ষম। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে তা করা সম্ভব হয় না।’ বৈঠকে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। সম্প্রতি শেষ হওয়া ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের পরাজয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। এদিকে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী ১৯৮২ সালের ‘দ্য স্ট্যান্ডার্ড অব ওয়েট অ্যান্ড মেজার্স অর্ডিন্যান্স’ সংশোধন ও পরিমার্জন করে আন্তর্জাতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাংলা ভাষায় আইনটির খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আর্থিক শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে মানদণ্ডহীন বাটখারা বা পরিমাপক ব্যবহারের শাস্তি অনূর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকারের অনুমতিক্রমে সম্পূর্ণ রপ্তানির উদ্দেশ্যে তৈরি বা উৎপাদিত কোনো বাটখারা বা পরিমাপক ব্যতীত কোনো পরিমাপক তৈরি করার অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মান সংস্থাসহ (আইএসও) অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার নিয়মকানুন এ আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর