সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বনানী কবরস্থানজুড়ে আধুনিকতার ছোঁয়া

দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ, বিশ্রামাগার ও মসজিদের ব্যবস্থা

জিন্নাতুন নূর

বনানী কবরস্থানজুড়ে আধুনিকতার ছোঁয়া

ঢাকার বনানী কবরস্থান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয়তমা স্ত্রী ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং তাদের শিশুপুত্র রাসেল এখানেই শায়িত আছেন। পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর এখানেই দাফন করা হয় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, তার স্ত্রী আইভি রহমান, জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ মনসুর আলী এবং সর্বশেষ নায়করাজ রাজ্জাকসহ আরও অনেক বিখ্যাত মানুষের শেষ ঠিকানা হয়েছে বনানীর কবরস্থান। ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ১৯৮১ সালে বনানী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কবরস্থানটি পরিচালনার   দায়িত্ব বুঝে নেয়। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কবর এখানে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ভিআইপিদের যাতায়াত থাকায় উন্নত সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও কবরস্থানটির আধুনিকায়ন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এরই মধ্যে বনানী কবরস্থানের আধুনিকায়ন ও সংস্কার প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

বনানীর ২৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত এ কবরস্থানের আগের মসজিদটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং কবর ধোয়া ও লাশ ধোয়ার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় কবরস্থানটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, যাদের এখানে কবর দেওয়া হয়েছে, সেই মৃত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত করতে আসা পরিবারের সদস্যদের জন্য, বিশেষ করে নারীদের, বসার জায়গাও এত দিন ছিল না। এ জন্য এখানে আধুনিক ছাউনিসহ বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা যায়, প্রথম ধাপে কবরস্থানটি সংস্কারের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। আর এ কবরস্থানের নকশা প্রণয়ন করেছে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড এবং এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশন। সম্প্রতি সরেজমিন কবরস্থানটি ঘুরে দেখা যায়, কবরের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে আলো-ঝলমলে সুবিশাল গেট। মসজিদের মিনার আকৃতির সেই গেটের চারপাশে আছে অত্যাধুনিক আলোক ব্যবস্থা। কবরের চারপাশের পুরনো দেয়াল ভেঙে নতুন করে উঁচু দেয়াল বানানো হয়েছে। দেয়ালে ক্যালিগ্রাফির (খোদাইকাজ) মাধ্যমে আরবি হরফে লেখা হাদিস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কবরস্থানটিতে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে একটি মসজিদ। আর ডান পাশের দ্বিতল ভবনে আধুনিক অফিসকক্ষ ও বিশ্রামাগার। কবর জিয়ারত করতে আসা কোনো মানুষ চাইলে এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের কবরগুলোর ওপর আধুনিক ছাউনি বা টেন্টপ্রুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা ও কবর জিয়ারত করতে আসা মানুষদের রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে এ ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ওপর ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে, যাতে প্রাকৃতিকভাবেই কবরের ওপর ফুল ঝরে পড়ে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির পরিচালক খেন্দকার মাহাবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমরা কবরস্থানটির আধুনিকায়ন ও সংস্কারের কাজ করছি। আমাদের ইচ্ছা এবারের শোক দিবসের আগেই কাজ শেষ করার। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। এখন দেয়ালে লাইটিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের কবরগুলোর পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজও করা হয়েছে। পরে পুরো ওয়াকওয়ে জুড়ে ছাউনির ব্যবস্থা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর