শিরোনাম
বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক ব্যাধি

মাহমুদ আজহার ও ফারুক তাহের, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে

ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক ব্যাধি

উখিয়ার থাইংখালীতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে রোহিঙ্গাদের। পাহাড় কেটে গড়ছে বসতী (বামে)। কুতুপাংয়ে রাস্তার ধারে সন্তান নিয়ে অসহায় এক মা —রোহেত রাজীব

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মরণব্যাধি এইচআইভি এইডসসহ জটিল সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। কলেরা, টাইফয়েড, পোলিও ও যক্ষ্মার মতো রোগ দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ১৯ জন রোগীকে শনাক্ত করেছে কক্সবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাসেবা নিতে আসার কারণেই এই ২১ জন এইচআইভি বহনকারীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি এক রোগী মারাও গেছেন। এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় স্থাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কলেরা, টাইফয়েড, পোলিও, যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বসা অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকের শরীরে তাদের অজান্তে এইচআইভি ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মেডিকেল ক্যাম্পগুলো জানায়, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও সেদেশের মগ-মুরংদের হাতে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হলেও রক্ষণশীলতার কারণে অনেকেই প্রকাশ করছে না। সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসার পর পরীক্ষায় কিছু কিছু এইডস আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে।

জানা গেছে, মিয়ানমারে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি এইচআইভি এইডস আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও যাদের একটি অংশ রোহিঙ্গা। গত দেড় মাসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করায় এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গারাও অবাধে চলে আসে। ফলে সারা দেশে এই রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২১ জন এইডস রোগীকে চিহ্নিত করা গেছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে। তবে বিভিন্ন এনজিওর সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের রক্ত পরীক্ষা করা গেলে এর প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যারা চিহ্নিত হয়েছে তাদের আলাদা চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। তা নাহলে এই মরণব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।’ উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজবাহ আহমদ বলেন, রোহিঙ্গারা এমনিতেই পুষ্টিহীনতার শিকার। তার পাশাপাশি মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো স্বাস্থ্যসেবা দেয় না। শিশু কিংবা গর্ভবতী মায়েদেরও দেওয়া হয় না কোনো টিকা। তাই রোহিঙ্গা শিশুরা কলেরা, টাইফয়েড, পোলিওর মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে। তারা যখন এখানে অবস্থান নিচ্ছে, তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং আমাদের প্রয়োজনেই রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের সব ধরনের টিকা ও চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

কলেরার টিকা : রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল থেকে কলেরার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। উখিয়া উপজেলায় কলেরার এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দফায় গতকাল থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে অর্থাৎ প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার জনকে কলেরার টিকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় দফায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। বিশেষ এই টিকাদান কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। জানা গেছে, উখিয়াসহ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেওয়া এলাকাগুলোর ১৬টি স্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ১২টি অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ২৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ১০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রও সহযোগিতা করছে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জাতিসংঘের সাতটি সংস্থা, ১৪টি আন্তর্জাতিক এবং ১৯টি দেশীয় এনজিও ছাড়াও ৪৩টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও ২১টি অ্যাম্বুলেন্স স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা দলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮১৮ জানকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা : গতকালও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোক্তা ত্রাণ ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের মাধ্যমে ওষুধ বিতরণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। গতকাল দুপুরে উখিয়ার থাইংখালীর হাকিমপুরে সহস াধিক রোহিঙ্গার মধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ছিল—হাঁড়ি-পাতিল, কড়াই, চামচ, গ্লাস, প্লেট, জগ, মগ, বালতি, বাটিসহ রান্নার বিভিন্ন উপকরণ। রান্নার উপকরণ পেয়ে রোহিঙ্গারা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

এরপর সাবেক এই মন্ত্রী যান ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মেডিকেল ক্যাম্পে। সেখানে ্ওষুধের জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেন। এ সময় তার সঙ্গে সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকী ছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান সারওয়ার জাহান, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী মেজবাহউদ্দিন রাজু, যুবদল নেতা মাসুদ রানা, ছাত্রদল নেতা আমির প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন।

সর্বশেষ খবর