শিরোনাম
রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভালো নেই রোহিঙ্গা বৃদ্ধরা

রেজা মুজাম্মেল, কক্সবাজার থেকে

কক্সবাজারের ময়নারঘোনা ক্যাম্পের বয়োবৃদ্ধ হান্ডা মিয়া। বয়স তার ১২০ বছর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন বেশ। নিজের দুই সন্তানের কাঁধে ভর করে ‘অগ্নিমুহূর্তের’ আঙিনা থেকে ফেরা। কিন্তু জীবনের গোধূলি লগনে এসেও জীবন আছে চরম হতাশায়। বয়সের রুষ্টতা পিছু ছাড়ছে না তার। ক্যাম্পের একটি তাঁবুর কোণেই কোনোরকম দিন পার করছেন তিনি। আক্ষেপ করে বললেন, ‘জান নিয়ে বেঁচে আইছি। এখন কোনোরকম সময় পার করা। ভালো-মন্দ দেখার সুযোগ কই। যে খারাপ অবস্থায় আছি, কখন যে মরে যাই তার ঠিক নাই।’ একই ক্যাম্পে ১১৫ ও ১১০ বছর বয়সী প্রবীণ আছেন বলে জানা যায়। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখ থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা বয়োবৃদ্ধ রোহিঙ্গাদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় তাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দিনটা কোনোরকম পার করতে পারলেও রাত আসার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে আসে অন্ধকারের কালো ছায়া। অবহেলা, অনাদরে কোনোরকমে সময় পার করছেন তারা। বঞ্চিত তারা নানা নাগরিক সুবিধা থেকে। ক্ষেত্রবিশেষ উপেক্ষিত স্বয়ং স্বজনের কাছেও। মঙ্গলবার দুপুরে এন এন জোনে গিয়ে দেখা যায়, এ জোনের একটি তাঁবুর কোণে নিজেকে গুটিয়ে রেখে বসে আছেন প্রবীণ গোলাম নবী (৯৫)। কথা হয় এ ক্যাম্পে কাজ করা উন্নয়নকর্মী রোজিনা আকতারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক প্রবীণকে অপরিষ্কার জায়গায় অবহেলা-অনাদরে ফেলে রাখা হয়েছে। জীবনের মান বলতে তারা হয়তো ভুলেই গেছেন। গতকালও একজন প্রবীণকে আমি তার হাত ও পায়ের নখ কেটে দিয়েছি। তারা বড়ই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ কেবল গোলাম নবী নন, এ রকম প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পের তাঁবুতেই বয়োবৃদ্ধরা হাত-পা গুটিয়ে কোনোরকম শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় খাবার কখনো মিলছে, কখনো মিলছে না। প্রহর গুনছেন শেষযাত্রার। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘বয়োবৃদ্ধদের বিষয়টি আমাদের বিশেষ নজরে আছে। তারা এখানে এসে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে তাদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায় থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সমস্যা হচ্ছে তা কেটে যাবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইংরেজি অক্ষর ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ দিয়ে ২০টি জোনের নামকরণ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনে আছে আটটি করে ব্লক। প্রতিটি ব্লকে আছে ১৫টি করে উপ-ব্লক। প্রতিটি উপ-ব্লকে আছে ১০০টি করে তাঁবু (ঘর)। কেবল টি জোনের আটটি ব্লকেই আছেন প্রায় ৯ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিটি তাঁবুতে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব বৃদ্ধ মানুষ। এসব বয়োবৃদ্ধকে নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রজেক্টের ফোকাল পারসন মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধ নারী-পুরুষ রয়েছেন, যারা বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন। তবে এসব বয়োবৃদ্ধের জন্য ইপসার উদ্যোগে ‘‘প্রবীণ-বান্ধব কেন্দ্র’’ স্থাপন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের বয়োবৃদ্ধদের দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা ও বিনোদন। এ ছাড়া দৈনন্দিন জীবনে তাদের সমস্যা, সমস্যার প্রকারভেদ, শারীরিক অবস্থা, বয়স উপযোগী খাদ্য পাচ্ছেন কি নাসহ এ জাতীয় মৌলিক প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করার কাজ চলছে।’ জানা যায়, মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপত্সংকুল অবস্থায় পড়তে হয় বৃদ্ধদের। প্রবীণরা কেউ আসেন সন্তানের কোলে করে, কেউ আসেন পিঠে চড়ে। অনেক অতিশয় বৃদ্ধকে আনা হয়েছে দুজনের কাঁধে ভর করে। এ ছাড়া পরিবার নিয়ে আসার সময় বয়োবৃদ্ধরা দ্রুত হাঁটতে না পারায় পেছন থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। একই সঙ্গে অনেক প্রবীণকে ফেলে চলে আসার দৃষ্টান্তও আছে বলে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর